পিরোজপুর: পিরোজপুরে দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে চিরকুট লিখে আল মামুন (৪০) নামে থানার এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।
বিষপান করার আগে আল মামুন চিরকুটে লিখে রেখে গেছেন-আমি নিরদোশ (নির্দোষ), আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন।
সোমবার (০৫ জুন) সকালে পিরোজপুরের সদর থানায় কর্মরত আল মামুন বিষপান করেন। ওই দিন রাতে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আল মামুন জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের আবুল কালাম শেখের ছেলে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন বলেন, আমি এই থানায় নতুন যোগদান করেছি, কাজেই থানার অনেক অফিসারকেই এখনো চিনি না। তাছাড়া ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী কখনো আমার কাছে আসেনি। কাজেই তাকে কোনো ধরনের মন্দ বলা বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রশ্ন উঠে না।
এ বিষয়ে জেলার ইন্দুরকানী থানার ওসি মো. এনামুল হক বলেন, এখানে (ইন্দুরকানী) থাকাকালে ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্ত্রী একাধিকবার তার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করেছিলেন। পরে তিন মাস আগে সে জেলার সদর থানায় বদলি হয়ে যায়।
জানা গেছে, আল মামুন প্রায় ১০ বছর আগে ইন্দুরকানী থানায় ঝাড়ুদার হিসেবে চাকরি নেন। কিন্তু দুই মাস আগে তাকে ইন্দুরকানী থানা থেকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলি করা হয়।
নিহত আল-মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী মামুন গত রোববার (০৪ জুন) বিকেলে বাড়িতে ফেরার পর থেকে তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এরপর তাকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর সে জানায় যে, মসজিদ থেকে জায়নামাজ চুরির অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন তাকে গালমন্দ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এ ঘটনায় মামুন কোনো অঘটন ঘটাতে পারে এই আশঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা ওই দিন পুরো বিকেল এবং রাতেও তাকে দেখে রাখে। একপর্যায়ে সকালে বাজারে গিয়ে আগাছা নিধনের ওষুধ কিনে তা পান করেন মামুন। এরপর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে জানালে, তারা মামুনকে দ্রুত ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও মামুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায়, দ্রুত তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে নিয়ে রওনা হন স্বজনরা। ঢাকা নেওয়ার পথে রাতেই মামুনের মৃত্যু হয়।
মামুনের স্ত্রীর অভিযোগ ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওই থানার ওসি এনামুল হক তার স্বামীর ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত। এমনকি সে পিরোজপুর সদর থানায় যাওয়ার পরও ইন্দুরকানী থানার ওসি ওই থানার ওসির কাছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলেছে যাতে সেখানেও তার স্বামী নির্যাতিত হয়।
এছাড়াও ইন্দুরকানী থানার ওসি পরকীয়া বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন তা অস্বীকার করে মামুনের স্ত্রী জানান, তিনি কখনো তার স্বামীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ইন্দুরকানী থানার ওসির কাছে দেননি। তার স্বামীর কখনো কোনো নারী কেলেঙ্কারি বা চুরির অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দোষ নাই।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান মামুনের আত্মহত্যার বিষয়টি অবগত আছেন। তবে তাকে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো বিষয় তার জানা নেই। এছাড়া এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগও পাননি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, মামুনের লেখা চিরকুটের বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন।
চিরকুটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
মামুন ও মরিয়ম দম্পতির আফসানা আক্তার মীম নামের ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং আব্দুল্লাহ আল কাওসার নামে ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।
চিরকুটের শেষ অংশে মরদেহটির পোস্টমর্টেম না করে তার মামা বাড়িতে দাফনের দাবি জানিয়েছেন মামুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২৩
আরএ