ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিজের টাকায় সড়কের খানাখন্দ ঠিক করেন শাহাবুদ্দিন

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
নিজের টাকায় সড়কের খানাখন্দ ঠিক করেন শাহাবুদ্দিন ব্রিজ থেকে দেবে যাওয়া সড়ক ঠিক করছেন শাহাবুদ্দিন

বরগুনা: বরগুনা পৌর-শহরের অলিগলিতে বিভিন্ন সড়কের খানাখন্দগুলো সাধ্যমতো ঠিক করছেন মো. শাহাবুদ্দিন সওদাগর নামের এক ব্যক্তি।

আর এসব খানাখন্দ ঠিক করতে শহরের বিভিন্ন রাস্তার আশপাশে পড়ে থাকা ইট ও পাথরের টুকরো সংগ্রহ করেন তিনি।

পরে বাড়িতে নিয়ে সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নেমে পড়েন খুঁজে খুঁজে রাস্তার খানাখন্দ ঠিক করার কাজে।

যদিও তিনি পৌরসভা বা জেলা পরিষদের কিংবা সড়ক ও জনপদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নন।

নিজেকে জেলাবন্ধু জানিয়ে নিজ আগ্রহ থেকেই এ কাজটি করেন মো. শাহাবুদ্দিন সওদাগর। এ সমাজসেবীর বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার পৌর-শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ স্মৃতি সড়ক এলাকায়। পেশায় একজন চুক্তিভিত্তিক রোলার চালক হওয়ায় নিয়মিত তার কোনো কাজ থাকে না।

এতে অবসর সময়ে নিজ উদ্যোগে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হওয়া খানাখন্দ ঠিক করেন তিনি। বিশেষ করে রিকশা ও ভ্যান এসমস্ত ছোট গাড়ি এবং মানুষের চলাচলে সমস্যা হয় এমন সব স্থানগুলোতে সাধ্যমতো কাজ করেন তিনি। তার পরিবারের কেউ তাকে এ কাজে বাধা দিচ্ছেন না, তারা তার এমন কাজে খুশি, উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

সরজমিনে বরগুনার বাশবুনিয়া নামক এলাকায় দেখা যায়, একটি সংযোগ সড়ক দেবে যাওয়ায় গাড়ি নিয়ে ব্রিজে উঠতে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। এ ভোগান্তি কমিয়ে আনতে পাথর, বালু ও সিমেন্ট নিয়ে হাজির সাহাবুদ্দিন। নিজের হাতেই বালু-সিমেন্ট-পাথর মিলিয়ে ঠিক করতে শুরু করেন ব্রিজ থেকে দেবে যাওয়া সড়কের অংশগুলো।

নিয়মিত ব্রিজটি দিয়ে যাতায়াত করেন মাইঠা এলাকার সুজন নামের এ বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, শাহাবুদ্দিন নিজ উদ্যোগে যে কাজগুলো করেন তা সমাজের জন্য খুব উপকারী। বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি রাস্তার ছোট ছোট ভাঙাগুলো তিনি ঠিক করেন। এই ছোট ছোট ভাঙা থেকেই কিন্তু বড় দুর্ঘটনা ঘটে। শাহাবুদ্দিন সেসব ভাঙা ঠিক করে দেন।

বড় লবনগোলা নামক এলাকার ভ্যানে করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ডাব বিক্রি করেন বশির খলিফা নামের এক ব্যক্তি।

তিনি বলেন, নিজের খাওয়া খেয়ে এমন কাজ করা লোক আমি আর দেখিনি। শহরের বিভিন্ন সড়কের ছোট ছোট ভাঙা জায়গাগুলো নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বালু সিমেন্ট কিনে ঠিক করেন তিনি।

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, শহরের মধ্যে রাস্তায় অনেক জায়গার অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকদিন থেকেই দেখি রাস্তার বিভিন্ন ছোট ছোট ভাঙাগুলো ঠিক করেন শাহাবুদ্দিন। তবে আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি জনপ্রতিনিধি বা এ কাজে সংশ্লিষ্ট কেউ নন। নিজের উদ্যোগে রাস্তা মেরামত করে থাকেন তিনি।

পথচারী নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘খানাখন্দে ভরা এই সড়কে প্রতিদিন চলাচল করে হাজার হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন ও পথচারীরা। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বৃষ্টিতে ভোগান্তি ওঠে চরমে। জনগণের চলাচলের ভোগান্তি কমাতে সড়কে ইট বিছিয়ে চলাচলের জন্য কিছুটা উপযোগী করেছেন শাহাবুদ্দিন। ’

এ বিষয়ে শাহাবুদ্দিন সওদাগারের ছেলে মাইনুল ইসলাম রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা যে কাজগুলো করেন তাতে আমরা খুশি। তার সঙ্গে যদি আরও দু’একজন এগিয়ে আসতো তাহলে বরগুনার ছোট ছোট যে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা যেত।

নিজের এই কাজের বিষয়ে কথা বলেন শাহাবুদ্দিন সওদাগর।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গায় যে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে সেগুলোর কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বৃষ্টির সময় জমা পানির উপর দিয়ে মোটরসাইকেল বা কোন গাড়ি গেলে পানি ছিটে এসে পথচারীদের গায়ে পড়ে। আবার অনেক সময় এসকল জায়গা দিয়ে রোগী নিয়ে যেতেও সমস্য হয়। এত সমস্যা দেখেও কেউ যখন এগিয়ে এলো না, তখন ভাবলাম আমি নিজেই কাজে নেমে যাই। ভোটের জন্য নয়, মানুষের ভালোবাসা পেতে আমি রাস্তা সংস্কার করছি।

তিনি আরও বলেন, আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ, তেমন টাকা পয়সা নেই, তাই বেশি কিছু করতে পারব না। তবে আমার নিজের একটা স্লোগান আছে ‘আমাদের বরগুনা আমরাই গড়ব, ইচ্ছে করলে সবই পারব’। এ ইচ্ছাকে জাগ্রত করতে আমি একজন রোলারচালক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতাটুকু রাস্তার খানাখন্দ ঠিক করার কাজ দিয়ে প্রথমে কাজ শুরু করেছি।

এছাড়াও তিনি আরও বলেন, একটি রাস্তা মেরামতের জন্য সরকারিভাবে টেন্ডার হতে প্রায় দুই-তিন বছর সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে টুকটাক কাজগুলো আমার মতো আরও অনেকে শুরু করলে মানুষের ভোগান্তি কম হবে পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও উপকার হবে।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বাংলানিউজকে বলেন, শাহাবুদ্দিন নিজের টাকায় সড়ক সংস্কার করছেন বলে শুনেছি। তার সার্বিক প্রচেষ্টায় শহরের বিভিন্ন রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজ করে থাকেন তিনি, বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
এসএএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।