ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘দুপুরে হুমকি দিয়ে রাতেই কিলিং মিশনে নামেন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
‘দুপুরে হুমকি দিয়ে রাতেই কিলিং মিশনে নামেন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে’

জামালপুর থেকে: আওয়ামী লীগের এক মিটিংয়ে বাবু চেয়ারম্যান সরাসরি সাংবাদিক নাদিমকে খুন করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন তার ছেলে আবদুল্লাহ রিফাত।

তিনি বলেন, নিউজ করার কারণে বাবু চেয়ারম্যান বাবার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দেন।

বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে সেই মামলা খারিজের খবর পাওয়ার পর আবারও বাবাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই হুমকিই বাস্তবায়ন করলো চেয়ারম্যান, তার ছেলে ও তাদের লোকজন।

শুক্রবার (১৬ জুন) নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের দাফন শেষে এমন অভিযোগ করেন তার ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন রিফাত।

ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম সড়ক দিয়ে আসার সময় হঠাৎ তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি। পরে আরও কয়েকজন এসে আহত নাদিমকে মারতে মারতে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। পাঁচ থেকে ছয়জন মারধরে অংশ নিলেও এসময় চারপাশে আরও ৫-৬ জন হামলাকারীকে দেখা গেছে ফুটেজে।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু বাংলানিউজকে বলেন, বকশিগঞ্জ কলেজের পাশে অফিস থেকে কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ির দিকে রওনা দিই আমি ও গোলাম রাব্বানী নাদিম। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অতর্কিতভাবে সামনে থেকে আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয় নাদিমকে। এরপর ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।  

সেই সময় তিনি (মুজাহিদ) তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয় জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদ বলেন, এক পর্যায়ে লুঙ্গি পরা একটি ছেলে আমাকে মারধর করে।  

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন চাচ্ছিল সিসিটিভির আওতার বাইরে নাদিমকে নিয়ে যেতে। যে গলিতে নাদিমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে ছোট একটি ইটের দেয়াল ছিল। ইটের দেয়ালের পেছনে চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু দাঁড়িয়েছিলেন। আর তার ছেলে ফয়সাল সেই ইটের দেয়াল লাথি দিয়ে ভেঙে একটি ইট হাতে নিয়ে নাদিমের মাথায় আঘাত করেন।

নিহত নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বাংলানিউজকে বলেন, মূলত গত কয়েক মাস আগে বকশিগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের কমিটি প্রকাশ হয়। সেই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনের বাবা রাজাকার- এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। যার দায় পড়ে আমার বাবার ওপর। আমার বাবা নাকি সেই সংবাদে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছ থেকে হুমকি আসে। এর কয়েকদিন পর মধ্যবাজার এলাকায় বাবার ওপর একটি হামলা হয়। সেই হামলায় যুবলীগ নেতা শামীম খন্দকার ও ইসমাইল হোসেন নেতৃত্ব দেন। তার কয়েকদিন পর মাহমুদ আলম বাবু চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে বেশ কয়েকটি নিউজ করেন বাবা। এ ঘটনায় বাবাকে কয়েকবার হুমকি দেন বাবু চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ফয়সাল।

আওয়ামী লীগের এক মিটিংয়ে বাবু চেয়ারম্যান সরাসরি সাংবাদিক নাদিমকে খুন করার হুমকি দেন উল্লেখ করে নিহতের ছেলে বলেন, পরে সেই নিউজগুলোর কারণে বাবু চেয়ারম্যান বাবার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দেন। বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে সেই মামলা খারিজের খবর পাওয়ার পর আবারও বাবাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল বাবাকে মেরে ফেলতে চায়। সেই হুমকিই বাস্তবায়ন করলো চেয়ারম্যান, তার ছেলে ও তাদের লোকজন।

বাবা হত্যার বিচার চেয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, আমার বাবা আজ দুনিয়াতে নেই। আমি এই হত্যার বিচার চাই। জড়িতদের ফাঁসি চাই।  

অভিযোগ করে গোলাম রাব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিয়াতুল জান্নাত বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু আমার বাবার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আগেও নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন, মামলাও দিয়েছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তারা অনেকবার হুমকি দিয়েছেন বাবাকে, বুধবার (১৪ জুন) রাতে সেই হুমকি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে। আমি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। তারা আমার বাবাকে ধরে মারতে মারতে একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে।

গত বুধবার (১৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকশিগঞ্জ উপজেলার পাথাটিয়া এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।  

এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। ওই সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা।  

পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী মুজাহিদ ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

পরে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসএফ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।