ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রেপ্তার এড়াতে মোবাইলও ব্যবহার করছিলেন না চেয়ারম্যান বাবু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
গ্রেপ্তার এড়াতে মোবাইলও ব্যবহার করছিলেন না চেয়ারম্যান বাবু

ঢাকা: বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি মোবাইলও ব্যবহার করছিলেন না।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সঙ্গে থাকা দুই সহযোগীর ফোনের সূত্র ধরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার সন্ধান পায় র‍্যাব।

পরে শনিবার (১৭ জুন) সকালে দেবীগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ চেয়ারম্যান বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ঘটনার পর সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির ও জাকিরুল ইসলামসহ একসঙ্গে গা ঢাকা দেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। তদন্তে নেমে বাবুর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার দুই সহযোগীর ফোন খোলা ছিল। সে সূত্র ধরেই দ্রুত সময়ে র‍্যাব তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চেয়ারম্যান বাবু মোবাইল ব্যবহার না করলেও তার সহযোগী জাকিরুল ইসলাম ও মনিরুজ্জামান মনির নিজেদের মোবাইলে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছেন।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর থেকে ছায়া-তদন্ত শুরু করে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কাজ শুরু করে র‍্যাব-১৪ ও র‍্যাব-১২। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে চেয়ারম্যান বাবু এবং তার দুই সহযোগী জাকিরুল ও মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক হামলাকারী রেজাউলকে।

তিনি আরও বলেন, দুই সহযোগীসহ বাবু যেখানে ছিলেন, সেখানে তার অনেক পরিচিতরা বসবাস করে। সেখানেই এক আত্মীয়ের বাসায় তারা আত্মগোপনে ছিলেন।

এদিকে ঘটনার পর আরেক হামলাকারী রেজাউল করিম প্রথমে গাজীপুর তার এক দূরসম্পর্কের বোনের বাসায় যান। এরপর বগুড়ায় গিয়ে আরেক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চেয়ারম্যান বাবুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তার পরিকল্পনাতেই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। নাদিম সম্প্রতি চেয়ারম্যান বাবুর বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন করেছিলে। এজন্যই তিনি ক্ষিপ্ত হন। সংবাদের ঘটনায় প্রথমে নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পরে আদালত খারিজ করে দেন। এরপর নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এতে চেয়ারম্যান বাবু আরও ক্ষিপ্ত হন।

ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে বাবু তার সন্ত্রাসী গ্রুপের মাধ্যমে সাংবাদিক নাদিমকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এর অংশ হিসেবে বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল। আর বাবু ঘটনাস্থলের কাছেই অবস্থান করে হামলার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

এর আগে বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।

নাদিম হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুলকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
পিএম/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।