ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নকলের কথা বলে দেওয়ায় সহপাঠীদের শরীরে ব্লেডের আঘাত, মামলা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
নকলের কথা বলে দেওয়ায় সহপাঠীদের শরীরে ব্লেডের আঘাত, মামলা 

বাগেরহাট: বাগেরহাটের ফকিরহাটে ব্লেড দিয়ে আঘাত করে তিন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় মামলা হয়েছে।  

সোমবার (১৯ জুন) রাতে অভিযুক্ত নাসির সরদারকে (১৮) আসামি করে ফকিরহাট মডেল থানায় মামলাটি করেছেন আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শত্রুতার জেরে নাসির তার দুই সহপাঠীসহ তিন শিক্ষার্থীকে ব্লেড দিয়ে পোচ দেয়। সহপাঠীদের ভাষ্য, পরীক্ষার হলে ‘নকলের কথা শিক্ষকদের বলে দেওয়া’ এবং সহপাঠীদের খাতা দেখতে না দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় আহত ও জড়িত শিক্ষার্থীদের সবাই ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর সাকিনা-আজাহার টেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র। গতকাল সোমবার দুপুরে কলেজের পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে উপজেলার শান্তিগঞ্জের মোড়ে ওই ঘটনা ঘটে। এতে কলেজের একাদশ শ্রেণির বিএম ট্রেডের ছাত্র– জাকারিয়া হাওলাদার (১৭), জয়ন্ত রাহা (১৭) ও একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্র মুসা আব্দুল্লাহ (১৬) আহত হন।

তাদের মধ্যে জাকারিয়া ও জয়ন্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়াতে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। আর মুছাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত জাকারিয়া হাওলাদারের সঙ্গে থাকা তার বাবা দুলাল হাওলাদার মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন তার ছেলে এবং অপর শিক্ষার্থীর অবস্থা অনেকটা ভালো। সেখানে চিকিৎসা চলছে। বর্তমান অবস্থা স্থীতিশীল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এস এম মফিদুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসা আহত তিনজনের মধ্যে জাকারিয়া ও জয়ন্ত মাথায়, বুকে পেটে, জয়ন্তের মুখের বামপাশে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের ক্ষত চিহ্ন ছিল। আর মুছা আবদুল্লাহর পিঠে আঘাত। মুছাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক হওয়াতে আহত জাকারিয়া ও জয়ন্তকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহত শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা বলছেন, ওই দিন তাদের কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা চলছিল। ওই পরীক্ষা চলাকালে নকলের দায়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। তাদেরই একজন নাসির কলেজের অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওই শিক্ষার্থীর কাছে নকল থাকার কথা পরীক্ষার হলে দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বলে দেওয়াতে বহিষ্কৃত সহপাঠী ক্ষুব্ধ হয়। হলে অন্যের খাতা দেখে লিখতেও জোর করছিল একাদশ শ্রেণির নাসির। বহিষ্কারের ক্ষোভ থেকেই নাসির ওই ঘটনা ঘটায়।

তবে এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জয়ন্ত রাহার বাবা সুভাস কান্তি রাহা বাদী হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছেন তাতে কেবল শত্রুতার জেরে হা  মলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  

সাকিনা আজহার টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শেখ মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা শেষে কলেজের অদূরে শান্তিগঞ্জের মোড়ে ওই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমরা শিক্ষকরা তাৎক্ষণিক সেখানে যাই। তখন আহত এবং হামলাকারী শিক্ষার্থী সবাই সেখানে ছিল। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং হামলা করা শিক্ষার্থী নাসিরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে কী কারণে ওই হামলার ঘটনা ঘটে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনি।

আর নকলের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শেখ মিজানুর রহমান বলেন, ওই দিন নকলের জন্য দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারা পরীক্ষা শেষ হওয়ার বেশ আগেই চলে যান। আর নকল শিক্ষকরাই ধরেছেন। এখানে অন্য শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যেজন্য এ বিষয় নিয়ে হামলা হয়নি বলেই তিনি মনে করছেন। আর কেন হামলা হয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে দেখছে।

জানতে চাইলে ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আলীমুজ্জামান বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। ব্লেড দিয়ে হামলা চালানো হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী নাসিরকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে।

আর হামলার কারণ হিসেবে ওসি পূর্ব শত্রুতার কথা বললেও কী পূর্ব শত্রুতা সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।

মামলা তদন্ত কর্মকর্তা ফকিরহাট মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাশেম বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে কী নিয়ে শত্রুতা ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।