ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা সেতু: এক বছরে গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে শহুরে মানুষের

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
পদ্মা সেতু: এক বছরে গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে শহুরে মানুষের পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে

মাদারীপুর: দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের সেতু পদ্মা! রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে পদ্মা নদীই ছিল একমাত্র বাধা। পদ্মায় সেতু হওয়ায় সে বাধা কেটেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।

দেখতে দেখতে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের এক বছর হতে চললো।

পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নানান ধরনের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ভোগ করছেন নানা সুবিধাও। তার মধ্যে একটি হলো গ্রামের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে! পদ্মা সেতুর ফলে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বার বার শিকড়ে ফিরতে পারছে। নিজ গ্রামে যখন-তখন আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। 'মন ভালো' করতেও অসংখ্য মানুষ মুহূর্তেই ছুটে আসেন নিজ গ্রামে! 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে শুরু করেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। রাজধানী ঢাকায় যেতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের যে অসহনীয় ভোগান্তি, তার অবসান ঘটেছে। দীর্ঘদিনের এক ঘেয়েমি নৌযাত্রা আর ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার চিত্র নিমিষেই বদলে যায়।

যেকোনো প্রয়োজনেই রাজধানীমুখী হতে থাকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। কাজ শেষে ঘরে ফিরতেও তাড়া নেই, গাড়িতে চড়ে বসলেই বাড়ি পৌঁছাতে পারছেন। 'ঢাকা টু ঘরের দরজা' টাইপ যাতায়াত হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষের। ফলে গ্রামের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে। শুক্র-শনিবার ছুটির দিনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবারই বাড়ি ফিরতে থাকেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ। দু-দিন বাড়ি থেকে রোববার ঢাকা গিয়ে সরাসরি অফিস করেন এমন সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জানতে চাইলে ঢাকায় চাকরি করেন মাদারীপুরের শিবচরের এমন অসংখ্য ব্যক্তি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদ ছাড়া দুই/একবারের বেশি বাড়ি ফেরা হয়ে উঠতো না। নৌপথের ভোগান্তির কথা মাথায় এলেই আর ঢাকা ছাড়তে ইচ্ছে করতো না। আর এখন বৃহস্পতিবার বিকেল হলেই মন চলে যায় বাড়িতে। চলেও আসা হয়। এ কারণে গত এক বছর হলো গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে। '

বদরুল আলম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বলেন, আগে মন টানলেও বাড়ি ফেরা হতো না। এখন সুযোগ পেলেই বাড়ি চলে আসি। গ্রামের সতেজ পরিবেশ খুবই ভালো লাগে। কখনো কখনো রাতেও বাড়ি চলে আসি। এখন আর বাড়ি ফিরতে চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। ঘন ঘন গ্রামে আসা হয়। গ্রামের সঙ্গে দূরত্ব কমেছে, সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে।

আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, পরিবারের সবাই গ্রামে থাকে। তাই ইচ্ছে হলেই বাড়ি চলে আসি। বৃহস্পতিবার অফিস করে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই গ্রামে আসি। আবার রোববার গিয়ে অফিস করি। গত এক বছরে অসংখ্যবার গ্রামে যাওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর বড় সুফল আমার কাছে এটাই!'

পদ্মা সেতু চালুর পর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী গ্রামের মানুষগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হরহামেশাই ছুটে আসছেন বাড়িতে। গ্রাম থেকে যারা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন ছিলেন, সেই শহুরে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে গ্রামের বাড়িতে। বাড়ছে মেল-বন্ধনও। পাশাপাশি পরিবার-পরিজন রেখে কংক্রিটের নগরে একঘেয়েমি জীবন-যাপন যারা করছেন, তাদের মনে প্রশান্তি জাগিয়েছে পদ্মা সেতু। ভোরে রাজধানী ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরি সকালের নাস্তা করেন এমন সংখ্যাও কম নয়!

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।