ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ক্যাবের সংবাদ সম্মেলন

খামারিকে লাভবান করতে ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে

সিনিয়র করেসপনন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
খামারিকে লাভবান করতে ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে

ঢাকা: খামারিদের লাভবান করতে বাড়তি দামে মাংস খাইয়ে ভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটি মনে করছে, দেশের চাহিদার তুলনায় গরুর উৎপাদন কম।

এ কারণে দাম বেশি। এক কেজি গরুর মাংস কিনতে ৮০০ টাকা গুনতে হয়। কম আয়ের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছে। ভারত থেকে কমপক্ষে এক লাখ গরুর আমদানি করলে বাজারে গরুর মাংসের দাম কমবে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ক্যাব আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন শুভ রহমান।

গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয় না থাকার কারণে ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা যাচ্ছে না। ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয় ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ দেখে, এ সব বিভাগের সমন্বয় করে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই। ফলে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য যেসব বিভাগ কাজ করে সেখানে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করে। আর ভোক্তার স্বার্থ উপেক্ষিত হয়।

তিনি ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা বিভাগ ও বাণিজ্য বিভাগ নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুটি বিভাগ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে কাঠামো তাতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে। এ কাঠামোয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে কিছু মানুষের ইচ্ছায় বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে।

বৈশ্বিক কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। এটা একটি অজুহাত। দেশের ভেতরের মুষ্টিমেয় লোকের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার কারণে কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

গোলাম রহমান বলেন, চীনে মূল্যস্ফীতি একের ঘরে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৬ এর ঘরে। আমাদের দেশে মে মাসে ৯ শতাংশের উপরে ছিল। যদিও প্রকৃতি মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। সরকার সিন্ডিকেট ভেঙে বাজারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই পণ্যের দাম কমে আসবে।

চলতি বছরে সরকার ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ মানেই বাজারে তার পাঁচগুণ প্রভাব পড়ে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। আগামী বছর সরকারের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর বেশি ঋণ নেবে। ফলে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্য ঠিক করেছে তা শীঘ্রই কমানো সম্ভব নয়, আগামী বছরও বাড়তি মূল্যস্ফীতি মানুষকে ভোগাবে। এ জন্য কৃষিসহ যেসব ভর্তুকি সরকার দিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষকের কাছে সার, বীজসহ যেসব কৃষি উপকরণ আছে সেগুলো পৌঁছে দিতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যবসায়ী-আমদানিকারকের কাছে সব পণ্যবাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা কারসাজি করে এ সব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এসব অসাধু মানুষ পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।

বাজারর নিয়ন্ত্রণে তিনি সুপারিশমালা তুলে ধরে বলেন, পাইকারির ও খুচরা দাম নির্ধারণ ও বাজারে ঝুলিয়ে দিতে হবে। চাহিদা মতো পণ্য নিশ্চিত করতে হবে। বাজারের পণ্যমূল্য বেধে দিতে হবে এবং সেই দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। পেঁয়াজ, আদা রসুনের মতো মসলা জাতীয় পণ্যের বীজ, সার, লাগসই জাত সুলভ মূল্যে কৃষকেরে কাছে পৌঁছাতে হবে। পেঁয়াজ রসুন, আদার শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। বাজারে গরুর মাংসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনে এক লাখ গরু ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।

চিনিকল মালিকরা ইচ্ছামত মূল্য বাড়াচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাজারে নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে হবে। বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে হবে। বাজার কিছু আমদানিকারকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সড়কে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ে, এ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। খাদ্যপণ্যে বন্দরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ছাড়করণের ব্যবস্থা করতে হবে। মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের গরুর মাংস সুলভ মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।