ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা সেতুর এক বছর: ভোগান্তি নেই তাই ঈদে বাড়ি ফিরতে তাড়া নেই 

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
পদ্মা সেতুর এক বছর: ভোগান্তি নেই তাই ঈদে বাড়ি ফিরতে তাড়া নেই  পদ্মা সেতু

মাদারীপুর: পদ্মা সেতু চালুর বর্ষপূর্তি আজ। পদ্মার এপার-ওপার সড়ক পথে যুক্ত হওয়ার পর উন্নয়নের নানা হিসেব-নিকেষ চলছে।

অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণের জনপদ। তবে সাধারণ মানুষের কাছে 'অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির' বিশ্লেষণের চেয়ে ঈদ মৌসুমে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারাই হচ্ছে পদ্মা সেতুর ফলে হওয়া 'উন্নয়ন'! 

গত বছর সেতু চালুর পর কোরবানির ঈদ, চলতি বছর রোজার ঈদে ছিল বাড়ি ফেরার একরাশ প্রশান্তি। এই ঈদেও ঘরে ফেরা নিয়ে কোনো তাড়াহুড়া নেই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের।  

আলাপচারিতায় এমনটাই বলেন মাদারীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে ঈদ গেছে দুটি। সন্নিকটে আরও এক ঈদ। এই ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ বাড়ি ফেরে। পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদযাত্রার চরম ভোগান্তি ছিল পদ্মা পার হওয়ার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে বাড়ি ফেরা ছিল চরম দুর্ভোগের। এরপরও শিকড়ের টানে ঘরে ফিরতে হতো মানুষকে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঈদ যাত্রায় এসেছে স্বস্তি ও আরাম।  

যাত্রীরা জানান, ঈদের আগের রাতেও এখন বাড়ি ফিরতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। পথে কোনো তাড়াহুড়াও নেই। ঢাকা থেকে বাসে চড়ে বসলেই বাড়ি ফেরা যাচ্ছে সহজেই। একইভাবে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতেও নেই ভোগান্তি।

পদ্মা সেতৃু চালুর আগের অবস্থাআহসান হাবিব নামে এক যাত্রী জানান, আর তিন/চারদিন পরেই কোরবানির ঈদ। বাড়ি এসেছিলাম কোরবানির গরু কিনতে। শুক্রবার এসেছিলাম। রোববার সকালে আবার ঢাকা যাচ্ছি। গিয়ে অফিস করবো। পদ্মা সেতু চালুর আগের সময় হলে এভাবে আসা-যাওয়া ছিল কল্পনা!

আবু বকর নামে বরিশালের এক ব্যক্তি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল তো ঢাকার দুয়ারে এখন! ঈদের সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে বসে থেকেছি। গাড়ি সিরিয়াল নিয়ে কত রকম বাণিজ্য, সুপারিশ ইত্যাদি। এরকমও হয়েছে, সিরিয়ালে গাড়ি দিয়ে ছয়/সাত ঘণ্টা বসে আছি। ফিরে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কী যে কষ্ট ছিল! পদ্মা সেতু আমার কাছে এ কারণেই আশীর্বাদ।

শাহ আলম নামে এক ট্রাকচালক বলেন, কোরবানির গরু নিয়ে ঢাকায় এক ট্রিপ দিয়ে এসেছি। আরও দুই ট্রিপ গরু নেব। পদ্মা সেতু আছে বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। আগে এক ট্রিপ নিয়ে ঢাকা যাওয়াই ছিল চ্যালেঞ্জ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চালু হতে পারে রেল সার্ভিস। রেল চালু হলে সড়কের পাশাপাশি রেলে চড়েও রাজধানী ঢাকা যাওয়া-আসা করতে পারবেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা। আর তাতে করে ঈদযাত্রা হবে আরও স্বাচ্ছন্দের। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে একটি বিশেষ ট্রেন পদ্মা সেতু অতিক্রম করে। ৫টি বগি-বিশিষ্ট ট্রেনটি ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে মাওয়া প্রান্তে পৌঁছায়। ওইদিন মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রেন চলে।  

আর তিন দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে ঘরে ফিরবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। তবে ঘরে ফিরতে এখন আর মানসিক চাপ নিতে হয় না ঘরমুখো মানুষের। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়েও ঘরে ফিরতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। কর্মস্থলের সব কাজ গুছিয়ে রেখে পরিবার নিয়ে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারছেন সাধারণ মানুষ। পদ্মা পাড়ের ঘাট এলাকায় চিরচেনা উপচে পড়া ভিড়ের চিত্র হারিয়ে গেছে গত বছরই। সেই চিত্র এখন দুঃস্বপ্ন!

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।