ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সেক্টরে কেয়ার মুন মহল্লার সোহেল আহমেদ দেড় লাখ টাকায় গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। তার ইচ্ছা ছিল চামড়া বিক্রি করে আশপাশের দরিদ্র মানুষকে টাকা দেবেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন সেকশন, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট ও ধানমন্ডির আবাসিক এলাকায় ঘুরে সর্বত্র এমনই চিত্র দেখা গেছে। এমন অবস্থায় পশুর চামড়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কোরবানিকারীরা।
এক্ষেত্রে আরও হতাশার কথা হচ্ছে, কোরবানির পর চামড়া কিনতে আসছেন না কোনো ব্যবসায়ী। কোনো কোনো এলাকায় দুয়েকজন ব্যবসায়ীকে পাওয়া গেলেও দাম বলছেন খুবই কম। গরুর চামড়া আকার ভেদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বলছেন। ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও করুণ। এ চামড়ার কোনো ক্রেতাই নেই।
চামড়া নিয়ে কথা বলতে নারাজ মিরপুর-১৪ এর হাবিবুর রহমান রুবেল। কেন এ বিষয়ে কথা বলতে চান না, জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কথা বলে লাভ কি! কে শুনবে কথা। এবার সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৪৮ টাকা বর্গফুট। কিন্তু ব্যবসায়ীরা একটি বড় গরুর চামড়ার দাম বলছে ৩০০ টাকা। এ চামড়া তো গরিব মানুষের হক। তাই বাটপারদের কাছে বিক্রি না করে এতিম খানায় দিয়ে দিয়েছে।
ফার্মগেটের তেজকুনি পাড়ায় দেখা মেলে একজন চামড়া ব্যবসায়ীর। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, বৃষ্টির মধ্যে ভিজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও বিক্রির সময় দাম পাই না। কিন্তু মানুষ মনে করে আমরা বেশি দাম না দিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছি; মানুষকে ফাঁকি দিচ্ছি। আমরা চামড়া সংগ্রহ না করলে তো চামড়ার গ্রাহকই পাবে না। যে দাম দিচ্ছি এ দামও পাবে না।
একই কথা বলেন মিরপুর-১০ এর আলি হোসেন। তিনি একজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম দিচ্ছি, কেন বেশি দিচ্ছি না সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে গিয়ে দেখে আসেন। পাইকাররা কত দামে কিনে। পোস্তাতেও যেতে পারেন।
মিরপুরের সেনপাড়াতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাদারকেয়ার গলির সব চামড়া যাবে স্থানীয় এতিম খানায়। যে দাম পাওয়া যাবে কোরবানির মালিককে অর্ধেক দেবে, বাকী অর্ধেক মাদরাসায় দেওয়া হবে। নাম না প্রকাশের শর্তে মাদরাসার একজন ছাত্র বলেন, আমরা কষ্ট করে চামড়া সংগ্রহ করি কিন্তু দাম পাই না। পায় বড় মহাজনরা।
চামড়ার দাম জানতে এই প্রতিবেদক যান সায়েন্স ল্যাবরেটরির ফুটপাতের খোলা হাটে। সেখানে দেখা যায় সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড় থেকে উত্তরে মিরপুরে রোডের আধা কিলোমিটার সড়কের পাশে চামড়া কেনার জন্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। দুয়েকজন চামড়া কেনা শুরুও করেছেন।
কথা হয় জয়নাল আবেদিন নামে একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, বড় গরুর চামড়া হলে ৬০০ টাকা, মাঝারি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ছোট্ট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তারা ছাগলের চামড়া কিনছেন না। লালমাটিয়া থেকে আসা মৌসুমি চামড়া বিক্রেতা রশিদুল হক ১৩টি চামড়া বিক্রি করলেন। দুটি বড় গরুর চামড়া ছাড়ানোর সময় কেটে যাওয়ায় জয়নাল আবেদিন ফেরত দিচ্ছিলেন। জবাবে রশিদুল দুটি ছাগলের চামড়া ফ্রি দেওয়ার শর্তে গরুর ত্রুটিযুক্ত চামড়া দুটি মাঝারি চামড়ার দামে বিক্রির প্রস্তাব দেন। শেষ পর্যন্ত এ শর্তেই বিক্রি হয়।
জয়নাল আবেদন বাংলানিউজকে জানান, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী বা মাঠ পর্যায় থেকে আসা মানুষের কাছে থেকে যে চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনি সেগুলো সাভার ট্যানারিতে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি করি।
পাশেই ইকবাল হোসেন নামে একজন ক্রেতা দুই সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে চামড়া কিনছেন। তিনি এপেক্স ট্যানারিসহ আরও দুটি ট্যানারিতে চামড়া সরবরাহ করেন। তিনিও বড় গরুর চামড়া হলে ৬০০ টাকা, মাঝারি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কেনেন। আর ছোট গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কেনেন।
এ সময় কিছু ব্যবসায়ী মিনি ট্রাক বোঝায় করে চামড়া নিয়ে আসেন। দাম কম বলায় বিক্রি না করে তারা পোস্তায় রওনা দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
জেডএ/এসআইএ