ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা সেতুর সুফল বইছে দক্ষিণাঞ্চলে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৩
পদ্মা সেতুর সুফল বইছে দক্ষিণাঞ্চলে

বরিশাল: পদ্মা সেতুর সুফল বইছে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথে। এক সেতুর কারণে গত এক বছরে ১০ গুণ পরিবহন কোম্পানি যুক্ত হয়েছে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায়।

ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষ কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই প্রিয়জনের সঙ্গে এবারের ঈদ আনন্দ করতে স্বল্প সময়ে বাড়ি ফিরেছেন মানুষ। আবার ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতেও তারা শুরু করেছেন।

শনিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে রাজধানী ঢাকাগামী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে নামিদামি কোনো কোম্পানির বাস খালি যায়নি। যদিও বলা হচ্ছে রোববার (২ জুন) যাত্রীচাপ বেশি হবে ঢাকাগামী বাসগুলোতে। আর এক পদ্মা সেতুর কারণে বর্তমানে সড়কপথে যাত্রী চাপ সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-বরিশাল রুটে দেড়শ’র মতো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতো, আর এখন ছয়শ’র মতো বাস চলাচল করে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ কোম্পানির বিলাসবহুল বাসও রয়েছে।

যদিও বড় বড় কোম্পানিগুলো বাদে কিছু পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে স্বল্প সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে খুশি এসব যাত্রীরা। এদিকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ভাটা পড়েছে নৌ-পথে। আগের মতো যাত্রী না হওয়ায় ঈদ স্পেশাল সার্ভিস বন্ধ রাখার পাশাপাশি বহরে কমানো হয়েছে লঞ্চের সংখ্যাও।

শনিবার নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সঠিক সময়ে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে যাত্রী আসছেন। এরপর কাউন্টারের স্টাফরা যাত্রীদের নির্ধারিত গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিটগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বিলম্ব না করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করছে বাসগুলো।  

বিলাসবহুল পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফরা জানিয়েছেন এক থেকে তিন জুলাই পর্যন্ত তাদের কোনো বাসের সিট খালি নেই, অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। যদিও কিছু বাসে শনি ও সোমবারের কিছু টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।

নগরের লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা মিলন হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে লঞ্চেই আসা-যাওয়া করতাম। কেবিনে থাকলেও নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে গিয়ে লঞ্চে উঠতে হতো। তারপর যাত্রীদের ঠাসাঠাসিসহ বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। আর এখন পদ্মা সেতুর কারণে সাত থেকে আট ঘণ্টার পথ মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় পাড়ি দিলাম, কোনো ধরনের দুর্ভোগ ছাড়াই।

তবে সরু সড়কের কারণে বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি থাকে বলে অভিযোগ নার্গিস বেগমের।

তিনি বলেন, ঈদের আগে যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যত অল্প সময়ে এসেছি, তার থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি সময় লেগেছে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পৌঁছাতে। বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরু মহাসড়কে বৈধ-অবৈধ এমন কোনো যানবাহন নেই যা চলে না। এ কারণে মহাসড়কটিতে যানবাহনের যেমন চাপ বেশি, তেমনি রয়েছে ধীরগতি বলে তিনি দাবি করেন।

যদিও চাপ কমাতে সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ, এরইমধ্যে ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়েছে।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়ের মতো আরেক এক্সপ্রেস ওয়ে হবে। যা বর্তমান সমস্যার নিরসন করবে।

এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর নৌ-পথে যাত্রীতে ভাটা পড়েছে। লঞ্চগুলোতে আগের মতো তেমন চাপ নেই বাড়ি ফেরা মানুষের। তাই ঈদের আগে ও পরে যেখানে ১৫ থেকে ২০টি লঞ্চ একবারে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করতো, সেখানে এখন করছে আট থেকে ১০টি লঞ্চ। তাতেও কাঙ্ক্ষিত যাত্রী হচ্ছে না বলে জানিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি।

যদিও ঈদের আগে ও পরের এ সার্ভিসকে ঘিরে নৌপথ ও বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতোই জোড়ালো রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।