রাজবাড়ী: মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি না থাকলেও ঈদ উদ্যাপন করতে প্রশিক্ষণের সরকারি গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনায় যান রাজবাড়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মজিদ। ঈদ উদ্যাপন শেষে ৭ দিন পর সেই গাড়ি ফেরত দিলেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপ-পরিচালক আব্দুল মজিদ ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ২৬ জুন রাজবাড়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কার (ঢাকা মেট্রো গ-১৭-৭৯৯৩) নিয়ে নিজে ড্রাইভিং করে গ্রামের বাড়ি পাবনায় চলে যান।
ঈদের আনন্দ, পরিবারের সদস্যদের ঘোরাঘুরি সবই চলে সরকারি এই প্রশিক্ষণ কারে। সাত দিনের ভ্রমণ শেষে গাড়িটি নিয়ে রোববার (২ জুলাই) বেলা দেড়টায় নিজ কর্মস্থলে পৌঁছান উপ-পরিচালক।
এসময় রাজবাড়ী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে ওই প্রশিক্ষণ কারের সামনের সিট থেকে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় নামেন উপ-পরিচালক আব্দুল মজিদ। আর চালকের সিটে ছিলেন উপ-পরিচালকের কলেজ পড়ুয়া ছেলে আবরার।
জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও রাজবাড়ী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের লাল রঙের বিলাসবহুল ওই প্রশিক্ষণ গাড়িটির কোথাও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কিংবা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম লেখা নেই। আর এই সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যত্রতত্র ব্যবহারের সুযোগ মিলছে গাড়িটির।
গাড়িটি কোথায় জানতে রোববার সকালে রাজবাড়ী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভিড় জমান স্থানীয় সাংবাদিকরা। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ থাকা দুটি প্রশিক্ষণ গাড়ির মধ্যে কালো রঙেরটি যথারীতি ওয়ার্কশপ কাম ট্রেনিং সেন্টারে রয়েছে। কিন্তু লাল রঙের গাড়িটি সেখানে নেই। অর্থাৎ তখনও পাবনা থেকে ফেরেননি উপ-পরিচালক আব্দুল মজিদ।
রোববার সকালে মোবাইল ফোনে কল করলে ওই প্রশিক্ষণ গাড়ির চালক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রশিক্ষক সোহানুর রহমান সোহান জানান , তিনি এখন গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়াতে অবস্থান করছেন। উপ-পরিচালক অসুস্থ থাকায় তাকে আনতে পাবনাতে যাবেন।
বেলা দেড়টায় সেই লাল গাড়িটি নিয়ে ফিরলে সাংবাদিকদের সামনে পড়েন তিনি।
সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের বিষয়ে উপ-পরিচালক আব্দুল মজিদ বলেন, সরকারি প্রশিক্ষণ গাড়িটি গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলায় নিয়ে গিয়েছি সত্য। কিন্তু সরকারি তেল তো নেই নাই। তেল কিনেছি। আজ (রোববার) গাড়িটি জমা দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঈদের আগে ওই প্রশিক্ষণ কারটি নিয়ে পাবনায় গিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে চুপিচুপি গাড়িটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
এবিষয়ে জানার জন্য মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফারুক বলেন, বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ কারের গায়ে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম না লিখে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে আসছেন। এটা মোটেই ঠিক নয়।
তিনি বলেন, এ ধরনের অনৈতিক কাজের অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। উপ-পরিচালকের এহেন কাজের বিষয়ে কারণ দর্শানো হবে বলে জানান তিনি।
গত ২৯ মার্চ রাজবাড়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল মজিদ। এরপর থেকেই নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ইতঃপূর্বেও বেশ কয়েকবার রাজবাড়ী থেকে প্রশিক্ষণ কার নিয়ে তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৩
এসএএইচ