ঢাকা: ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদি ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্স সেবা সহজীকরণ করতে এখন থেকে যেকোনো ব্যবসায়ী তার বাণিজ্য অনুমতি নেওয়ার পর যখন নবায়ন করবেন, তিনি চাইলে এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদী করতে পারবেন।
এখন থেকে প্রতি বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী মতিঝিল ঢাকা চেম্বারের একটি বুথ দিয়ে রাজস্ব সেবা ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন সেবা পরিচালনা করা হবে। এখানে ঢাকা চেম্বারের সব সদস্য আসতে পারবেন এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোর সেবাগ্রহীতার চাইলে এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিসিসিআই ভবনের অডিটোরিয়ামে দুই সপ্তাহব্যাপী ট্রেড লাইসেন্স সেবা বুথ স্থাপনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন সুবিধা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাপস।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) সদস্যদেরকে অধিকতর সেবা প্রদান ও বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স সেবা দেওয়ার জন্য ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বুথ স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের অডিটোরিয়ামে এ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মেয়র বলেন, আমরা কয়েকটি বিষয়ে ডিসিসিআই’র সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করছি। আমাদের ব্যবসায়ীদের একটা দাবি ছিল, প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এর ফলে ব্যবসায়ীদের অনেক সময় নবায়ন করতে মনে থাকে না অথবা শেষ সময় এসে নবায়ন করতে হতো। এমন অনেক বিষয় থাকে। আর সে কাজগুলোকে সহজীকরণ করতে এখন থেকে যেকোনো ব্যবসায়ী বাণিজ্য অনুমতি নেওয়ার পর যখন নবায়ন করবেন, তখন তিনি চাইলে নবায়ন এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদী করতে পারবেন। আর এ সুযোগ আমরা আজকে (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু করছি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ঢাকা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের সব কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ঢাকা চেম্বার ইতোমধ্যে তার অবস্থান করে নিয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের যে পরিসেবা তা আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে শুরু করছি। তাই এখন থেকে প্রতি বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী এখানে একটি বুথ দিয়ে আমরা রাজস্ব সেবা এবং ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন সেবার পরিচালনা করব। ঢাকা চেম্বারের সকল সদস্য আসতে পারবেন এবং আশেপাশের সকল অঞ্চলের সেবাগ্রহীতার চাইলে এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন। এখানে আমাদের উপকর এবং রাজস্ব কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আগে সব মিলিয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব আয় ছিল ৫২৪ কোটি টাকা। তবে কোনোরকম কর বৃদ্ধি না করে দুই বছর করোনার মাঝে কাজ করে বর্তমানে এক হাজার ৫৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। যেটা দ্বিগুণের চেয়ে পাঁচ কোটি টাকা বেশি। যা প্রমাণ করে, আমরা আমাদের সেবার মান বৃদ্ধি এবং সহজীকরণ করেছি। পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত এবং দুর্নীতিমুক্ত করে আমরা এই কার্যক্রমে সফল হয়েছি। সামনে দিকে এই রাজস্ব আয় আরও বৃদ্ধি হবে।
তাপস বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সসহ ঢাকাকে কেন্দ্র করে যাদের অবস্থান এবং চিন্তাচেতনা আছে তাদের সবাইকে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই। এবং সকলকে অংশীজন করে আমরা ঢাকাবাসী সেই স্বপ্নপূরণ করতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের সেবাকে অনলাইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করা। পাশাপাশি সেবার মানকে বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে রাজস্ব ব্যবস্থা যেহেতু আমাদের সেবার একটি বড় অংশ তাই সেই রাজস্ব ব্যবস্থাকে সহজীকরণ বা আধুনিকরণ করার কাজ করে চলছি।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন করোনা মহামারি চরম পর্যায়। তার মাঝেও আমরা কাজ করেছি। সেটার ফল আমরা এখন পাওয়া শুরু করেছি। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দেউলিয়াগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান ছিল। তখন ঢাকাবাসীর আস্থার জায়গায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিচের দিকে ছিল। তবে এখন জিডিপির ৩৬ ভাগ ঢাকাবাসী দিয়ে থাকে। আর আগে আমাদের ট্রেড লাইসেন্স এবং বাণিজ্য বাবদ আয় ছিল মাত্র ৫৫ কোটি টাকা। যদিও গত তিন বছরে ট্রেড লাইসেন্সের কোনো মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি। এবং ভবিষ্যতেও হবে না। সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও গত তিন বছরের মধ্যে এ অর্থ বছরে আমাদের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা। যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।
দক্ষিণ সিটির মহাপরিকল্পনা নিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকাকে যখন প্রথম শহর হিসেবে স্থাপন করা হয় তখন এর অভ্যন্তরে বিজনেস হাব ছিল চকবাজার। কিন্তু এখন চকবাজার তার জৌলুশ হারিয়ে ফেলেছে। পরবর্তীতে মতিঝিলকে একটি বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে করার কথা ছিল। কিন্তু সেটাও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন চাই এগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে। আমরা একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, যার মাধ্যমে চকবাজার ও মতিঝিলকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। একটি শহরকে যেভাবে সুপরিকল্পিত করা যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করছি। যা এ বছর থেকেই আমরা বাস্তবায়ন করছি।
এ মহাপরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কামরাঙ্গিরচরকেও একটি সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। সেখানে আমরা ৫০ তলা একটি স্কাই স্ক্র্যাপার নির্মাণ করব। যেখানে শপিং মলসহ পাঁচ তারকা হোটেলের মতো সব সুযোগসুবিধার জন্য অবকাঠামো থাকবে। উন্নত বিশ্বের যেমনটা থাকে সেই আদলে আমরা কামরাঙ্গিরচরকে উন্নত করার পরিকল্পনায় কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
ইএসএস/এমজে