ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মামলা থেকে খালাস পেলেন সেই দুই নির্বাচনী কর্মকর্তা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
মামলা থেকে খালাস পেলেন সেই দুই নির্বাচনী কর্মকর্তা!

সিলেট: নির্বাচনে অনিয়ম, সিল দেওয়া ব্যালট পেপার, মাদক, লক্ষাধিক টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার আলোচিত নির্বাচনী কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও আরিফুর রহমানকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যামকান্ত সিনহা এ দুজনকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন।

খালাসপ্রাপ্তদের একজন জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা। অন্যজন কৃষি কর্মকর্তা।

২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে জকিগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাদমান সাকিব ও আরিফুর রহমান। এদিনই তারা সিল দেওয়া ব্যালট পেপার, নগদ টাকা, ফেনসিডিল বোলতসহ গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানা পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করে।

উল্লেখ্য, ঘটনাটির পর উপজেলার কাজলসার ও সুলতানপুর ইউনিয়নের নির্বাচন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন।

জানা গেছে, পুলিশের করা মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) এ দুই কর্মকর্তাকে নির্দোষ হিসেবে অব্যাহতি দিয়ে রায় ঘোষণা করেন জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যামকান্ত সিনহা।

নির্বাচনী কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশ যে মামলা করেছিল, তার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে জকিগঞ্জের দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হকের সরকারি গাড়ি আটক করে। ওই গাড়িতে ছিলেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদমান সাকিব। তাদের চ্যালেঞ্জ করে গাড়ি তল্লাশি করা হয়। সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞার উপস্থিতিতে এ তল্লাশি হয়।

এ সময় চেয়ারম্যান প্রতীকে সিল মারা ৪০০ ও সিলছাড়া ৪০০ ব্যালট পেপার, মুড়ি বই চারটি, ইউপি সদস্য পদে সিল দেওয়া ব্যালট ও সিল ছাড়া ৪০০ ও মুড়ি বই ৪টি, সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচন ব্যালট সিল দেওয়া ও সীল ছাড়া মোট ৪০০ ও মুড়ি বই ৪টি, ব্যালট বক্সের লক ৮টি, মোবাইল ফোন ৪টি, নগদ ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা ও ১টি ফেনসিডিল বোতল জব্দ করা হয়।

পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় এএসআই মো. আব্দুল হাকিম বাদি হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

গ্রেপ্তারের কয়েকদিন পর জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন নেন সাদমান ও আরিফুর। তবে, নির্বাচন কমিশন তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। জকিগঞ্জের ওই দুটি ইউনিয়ন পরিষদে পরবর্তীতে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ১৫ জুন।

জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হলেও প্রায় এক মাস পর উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার পদ থেকে বরখাস্ত হন সাদমান সাকিব। মূলত, একই বছর ২ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপের পর জকিগঞ্জ ইউপি নির্বাচনের এ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে রাতারাতি বরখাস্ত করা হয়।

জকিগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, এ দুজনের ব্যাপারে দীর্ঘ তদন্ত করে তারা। পরে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন। মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সিলেটের সাবেক সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শুকুর মাহমুদ মিঞাসহ ১৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল।

আদালতে সাদমান সাকিব ও আরিফুর রহমানের পক্ষে মামলা লড়েন অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন ও অ্যাডভোকেট কাওছার রশিদ বাহার। তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় সাদমান ও আরিফুরকে আদালত খালাস দিয়েছেন বলেও তারা নিশ্চিত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।