ঢাকা: এখন থেকে বাংলাদেশের সব উপজেলা ভূমি অফিসের নামজারি শুনানির তারিখ জানানো হবে ফোনকলের মাধ্যমে। সেইসঙ্গে সেবার গুণগত মান সম্পর্কে সেবাগ্রহীতার মন্তব্য জানতে একটি ফোনকলও করা হবে।
কোনো সুনির্দিষ্ট নামজারি মামলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সেবাগ্রহীতার অসন্তোষের কারণটি রোবট ডিজিটাল উপায়ে সংগ্রহ করে শিগগিরই land.gov.bd ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ড প্রদর্শন করবে।
নামজারি সেবা সম্পন্ন হবার পর সেবাগ্রহীতা সেবার মানের বিষয়ে মতামত (ফিডব্যাক) দিতে পারবেন। প্রাপ্ত মতামত নিয়মিত মনিটরিং ও বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নামজারি সেবার গুণগত মান যাচাইয়ের পাশাপাশি দেশের সব উপজেলায় নামজারি শুনানির তারিখ জানাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটিক কল পৌঁছে যাবে সেবাগ্রহীতার ফোনে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভূমিসেবাতেও যুক্ত হবে নাগরিক সম্পৃক্ততার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
রোববার (৯ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভূমি ভবন মিলনায়তনে ‘দেশব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যম ভূমিসেবার গুণগত মান মূল্যায়ন ও স্মার্ট নামজারি শুনানির নোটিশ প্রদান কার্যক্রম’ এর উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, আমরা ভিশন-২০২১ অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের মন্ত্রণালয় একটি সেবামূলক দপ্তর। সুতরাং, আমাদের মানুষকে ভালো সেবা দিতে হবে। আমি খুবই পরিষ্কার একটি বার্তা দিচ্ছি। এখানে আমাদের কর্মীরা উপস্থিত আছেন। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালু করেছি, ডিজিটাল সেবা নিয়ে এসেছি। এগুলো আমাদের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সিস্টেম বদলাচ্ছে।
দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয় ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি সিস্টেম বদলাচ্ছি। আপনারা কেউ যদি মনে করেন, এখনো এগুলো করবেন। আমি বলবো, আপনারা মন্ত্রণালয় ত্যাগ করুন। যেমন: আমি যদি ভূমিকরের কথা বলি, এটা আমরা ক্যাশলেস করেছি। ২ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এটা মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে নেই। কাজের ল্যাকিংস আছে, ট্রাবলশ্যুটিং থাকবে। আমি এগুলো খুব ভালো করে জানি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করছি স্মুদ সেবা দিতে। আমাদের টার্গেটই হলো, যেসব সেবা ঘরে বসে পাওয়া সম্ভব, সেগুলো ঘরে বসেই দেওয়া। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে মানুষকে ফাইভ স্টার সার্ভিস দেওয়া।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়কে প্রাইভেট সেক্টরের একটি ফ্লেভার দিতে চাই। অর্থাৎ সেবার দিক থেকে আমরা মন্ত্রণালয়কে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মতো করে আধুনিক সেবা দিতে চাই। প্রতিটি জেলা শহরে একটি করে ভূমি সার্ভিস সেন্টার করব। আমাদের এখানের সেবাকেন্দ্রটি খুব ভালো ক্লিক করেছে। ঢাকা মানে বাংলাদেশ না, বাংলাদেশ মানে না ঢাকা। আমি যখন চিটাগং চেম্বার্স অব কমার্সের সভাপতি ছিলাম, তখন আমি এটি বলতাম ঢাকায় এসে। তাই আমি মনে করি, আমি বিকেন্দ্রীকরণ না করলে আমরা টেকসই সেবা দিতে পারব না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, উর্বর জমিতে ফসল ফলানো যায়, কিন্তু অনুর্বর জমিতে কেউ ফসল ফলালে তাতে কিন্তু সবাই অবাক হয়। আগে ভূমি মন্ত্রণালয় ছিল অন্ধকার, জঙ্গলাকীর্ণ। আমি দুঃখিত এটি বলার জন্য। কিন্তু, এখন সেই জায়গা থেকে অনেক উন্নত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, আজ একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছি। রেকর্ডপ্রাপ্তি মানুষের জন্য ছিল বড় একটি ভোগান্তি। দেখা যেত, আগে মানুষ দালাল ধরে মাসের পর মাস অপেক্ষা করত। আর, বর্তমানে মানুষ মোবাইলে ফি পরিশোধ করে ফোনেই মানুষ খতিয়ান পেয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু ভূমি মন্ত্রণালয়ের সফলতা নয়, সরকারের একটি বিশাল সফলতা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান।
স্মার্ট নামজারি কী?
দেশব্যাপী শতভাগ অনলাইনে নামজারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে ঘরে বসেই নাম খারিজের আবেদন এবং হয়রানি বা কোনোরূপ ভোগান্তি ছাড়াই নামজারি সেবা নেওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে অনলাইনে প্রায় ২ লাখের বেশি নামজারি আবেদন বা মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে।
২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে ই-নামজারি সিস্টেমকে পুরোপুরি ক্যাশলেস ঘোষণা করা হয়েছে। সব ভূমি অফিসে ম্যানুয়াল ভিসিআরের পরিবর্তে চালু করা হয়েছে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য কিউআর কোডযুক্ত ভিসিআর। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এখন থেকে নির্বাচিত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অনলাইনে দলিল নিবন্ধন করলে প্রয়োজনীয় তথ্য নামজারির জন্য পাঠানো হবে। দলিলে উল্লিখিত মোবাইলে একটি কোড নম্বর এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হবে। ভূমিসেবা পোর্টাল (land.gov.bd) থেকে এই কোড নম্বরের মাধ্যমে অনলাইনে ৭০ টাকা দিয়ে নামজারি করতে করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
এমকে/আরএইচ