ঢাকা: ‘নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার’ শীর্ষ নেতারাসহ সংগঠনটির অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নতুন জঙ্গি সংগঠনের ডাকে ঘরছাড়াদের মধ্যে ৫৫ তরুণের তালিকা করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাতে নতুন জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন প্রধান কার্যালয়ে এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপর র্যাব-১১ থেকে র্যাব সদরদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে ওই চারজনের পরিচয় পর্যালোচনা করে র্যাব নিশ্চিত হয় ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের তালিকায় তারা রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরে র্যাব যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের আইনি সহায়তাসহ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এই চারজনকে আটক করে।
এ বিষয়টি জানাতে বুধবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণ নিখোঁজ হয়। তাদের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে র্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনের তথ্য পায়। তখন র্যাব জানতে পারে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
পরে গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন ওই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৭৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য কেএনএফের ১৭ নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাব ইতোমধ্যে সংগঠনটির আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও উপ প্রধান মানিক, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবসহ নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, সংগঠনটির আমির মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার সঙ্গে কেএনএফ'র প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফের সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়। কেএনএফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতো। বিভিন্ন সময়ে র্যাবের পক্ষ থেকে ওই সংগঠনের সদস্যরা যাতে সঠিক পথে ফিরে আসেন এজন্য লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়। ২০২১ সালে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আম্বিয়া নামের এক নারী, যিনি নিজেই তার একমাত্র ছেলে আবু বক্করকে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে পাঠিয়েছিলেন। পরে ওই মা র্যাবের ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে অনুতপ্ত হয়ে ছেলেকে ফিরে পেতে আকুতি জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে আবু বক্করসহ নতুন জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) র্যাবের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করেন। নতুন জঙ্গি সংগঠনের ওই চার সদস্যরা হলেন, আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬), মো. হাসান সাইদ (২৬), শেখ আহমেদ মামুন (২৩) ও মো. ইয়াছিন (২১)।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, নিখোঁজ ৫৫ তরুণের তালিকার মধ্যে সর্বশেষ এই চারজনকে আটক করা হয়। এর বাইরে সাতজন রয়েছেন, যাদের ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য পায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে। কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা করে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় দুইজন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বিষয়ে ওই চারজন কী জানিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেএনএফের তিনটা ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ হতো। ওই চারজন যে ক্যাম্পে ছিল। এদের মধ্যে দুইজন মারা গেছে। ডা. আহমেদ ও আলআমিন অন্য ক্যাম্পে ছিলেন। তারা অন্যদের মাধ্যমে শুনেছেন ডা. আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। কারণ কেএনএফের সঙ্গে অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও প্রায়ই ঝামেলা হয়। আর আলআমিন প্রশিক্ষণকালীন নির্যাতনে মারা যেতে পারে।
ওই চারজনের কাছে কেএনএফের বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষদের অধিকাংশকেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের নতুন করে সংগঠিত হতে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৩
পিএম/এএটি