ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নলকূপের জন্য দেওয়া বাড়তি টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি গ্রাহকদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
নলকূপের জন্য দেওয়া বাড়তি টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি গ্রাহকদের

মানিকগঞ্জ: ‘দৌলতপুরে ১০ হাজার টাকার সরকারি নলকূপ ২৫ হাজার টাকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজে। এরপর সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় কর্মরত দুজন মেকানিক প্রদীপ কুমার ও আবুল হোসেনের লোক বেশ কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিয়েছেন বলেও জানা যায়।  

গ্রাহকরা বলছেন, টাকা ফেরত দেওয়ার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রাহকদের বলেছেন, কেন টাকা নিয়েছিলাম আবার কেন ফেরত দিলাম, এ বিষয়ে কোনো অফিসার জিজ্ঞেস করলে কোনো কিছুই বলার প্রয়োজন নাই। টাকা নিয়েছিলাম, সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিলাম, এখন তো আর কোনো অভিযোগ নেই আপনাদের (গ্রাহক)।  


জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের হাটাইল এলাকার সৌদি প্রবাসী লিয়াকত হোসেন নলকূপ পেয়েছেন। সরকার নির্ধারিত ফি ১০ হাজার টাকা হলেও এ নলকূপ পেতে তাকে গুণতে হয়েছে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩২ হাজার টাকা। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেকানিক প্রদীপসহ দুজন এসে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিয়ে গেছেন। টাকা ফেরত দেওয়ার সময় স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।  

একই দিন ধামশ্বর ইউনিয়নের বিল পাওলী এলাকার নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আরেক মেকানিক আবুল হোসেনের এক বিশ্বস্ত লোক। মেকানিকের সেই লোক নজরুলের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে গেছেন। আর একটি কাগজে স্বাক্ষরও নিয়েছেন তিনি।  

সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরের পর থেকেই কলিয়া ইউনিয়নের রবি খানকে ফোন দিতে থাকেন মেকানিক প্রদীপ কুমার। রবি খানের ফোন রিসিভ করেন তার স্ত্রী, পরে রবি খানকে উপজেলায় দেখা করতে বলতে বলেন প্রদীপ। দেখা না করায় সোমবার রাতে বার বার ফোন দেওয়ায় রবি খান ফোনটি বন্ধ করে রাখেন। এছাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দালাল চক্রটি ও অফিস স্টাফরা আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তারা দেখা করেছেন বলেও গ্রাহকরা জানিয়েছেন।

কলিয়া ইউনিয়নের হাটাইল এলাকার ভুক্তভোগী গ্রাহক লোকমান হোসেন বলেন, আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তারা আমার কাছ থেকে ছয়-নয় বুঝিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন, তবে আমার প্রয়োজন থাকায় তখন তাদের কিছুই বলতে পারিনি। এখন সাংবাদিকরা নিউজ করায় সুরসুর করে টাকা ফেরত দিতে চলে আসছে। তারা (মেকানিক প্রদীপসহ দালাল চক্র) এসে আমায় বলেছেন, যে কারণে আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম এখন আর সেই টাকার প্রয়োজন নাই, টাকা লাগবে না, টাকা ছাড়াই কাজ হয়ে গেছে। কোনো অফিসার কিংবা অন্য কেউ কোনো সময় এসে জিজ্ঞেস করলে বলবেন, কোনো টাকা পয়সা অফিসে দেন নাই। টাকা ফেরত দিতে এসে আমাকে মিথ্যা বলতে শিখিয়ে দিলেন! আমি তাদের কথা শুনে হাসলাম।  

অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে কে কে এসেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেকানিক প্রদীপ কুমারসহ দুজন এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার এক ফাঁকে আমার এক ভাতিজাও (দালাল) এসে উপস্থিত হয়।

নজরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক বলেন, মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেকানিক আবুল হোসেন একজনকে পাঠান আমার কাছে, তার পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, অফিস থেকে আসছি। অফিস থেকে আসা ওই ব্যক্তি আমাকে ১২ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে গেছেন। টাকা ফেরত দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন তিনি।  

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দালাল চক্রের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তবে কলিয়া ইউনিয়নের হাটাইল এলাকার এক দালাল ফোন রিসিভ করলেও সে কথা বলতে রাজি হননি। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়েও তিনি কিছুই জানেন না বলেও জানান।

দৌলতপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেকানিক প্রদীপ কুমার ও আবুল হোসেনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, কিসের টাকা? কাকে দেব? ওই এলাকায়ই যাইনি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দৌলতপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রিদওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মানিকগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ফাতেমা ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোনো অনিয়মের সত্যতা পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।