ঢাকা: ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নাম্বার হলো মোবাইল ডিভাইস শনাক্তকরণের ইউনিক কোড। চুরি-ছিনতাইয়ের মাধ্যমে খোয়া যাওয়া মোবাইল খুঁজে পেতে এই আইএমইআই নাম্বার ধরেই তদন্ত কার্যক্রম চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
চোরাই ফোনের আইএমইআই পাল্টে বাজারে বিক্রির খবর আগে পাওয়া গেলেও এবার রীতিমতো ল্যাবের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। যেখানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সফটওয়্যারের মাধ্যমে মোবাইলের আইএমইআই পাল্টে ফেলা হয়।
ডিবি জানায়, মোবাইল খোয়া গেলে আইএমইআই নাম্বারের সূত্র ধরে অনেক সময়ই খুঁজে পাওয়া যেতো। একপর্যায়ে চুরি যাওয়া ফোনগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ রেখে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টিও সামনে আসে। তারা ভাবতো প্রায় বছর খানেক একটি মোবাইল বন্ধ থাকলে পরে আর সেসবের খোঁজ করবেনা পুলিশ।
এরপরে চক্রটি কৌশল পাল্টে দামি মোবাইলগুলো সীমান্ত পার করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দিতো। আর তুলনামূলক কমদামী মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দিতো।
আর এখন কয়েকদিনের মধ্যেই আইএমইআই পাল্টে অন্যত্র চোরাই মোবাইলটি বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। ফলে হাত বদল হওয়া চোরাই মোবাইলও থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে, এমনকি নানা ধরনের অপরাধেও সেসব মোবাইল ব্যবহারের সম্ভাবনা থেকে যায়।
সম্প্রতি চোরাই মোবাইলের আইএমইআই পাল্টে ফেলার ল্যাবের সন্ধানসহ চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. সাইদুল ইসলাম (২১), মো. তৌহিদুল ইসলাম (৩৮), সোহেল রানা (২৯), মো. রানা শেখ (২৮), মো. বেলাল হোসেন রাসেল (২৫), আমির হোসেন (৫৪) ও মো. রবিন (৩০)।
এ সময় তাদের আইএমইআই পাল্টানোর ল্যাব থেকে মাইক্রোস্কোপ, কম্পিউটার, ২টি ল্যাপটপ, মোবাইলের আন-লক করার সিএমটু সফটওয়্যার ডিভাইস ও আইএমইআই পরিবর্তনের সিগমা সফটওয়্যার ডিভাইস, ৪টি ডাটা ক্যাবল, পাওয়ার মেশিন, হিটার মেশিন ও রাউটার।
এছাড়া, তাদের কাছ থেকে ১৯টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে, এরমধ্যে ৫ টি মোবাইলের প্রকৃত মালিকদের খুঁজে পেয়ে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৩ আগস্ট ডিবি মতিঝিল বিভাগের স্পেশাল অপারেশনস টিমের অভিযানে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকা থেকে চোরাই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনকারী চক্রের সদস্য সাইদুল ও তৌহিদুলকে গ্রেপ্তার করে।
পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকা থেকে এই চক্রের সদস্য আরও ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাইদুল, তার ভাই পলাতক সাইফুল ও তৌহিদুল দীর্ঘদিন ধরে সিএমটু ও সিগমা সফটওয়্যারের মাধ্যমে কৌশলে চোরাই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন অপরাধীদের অপরাধে সহায়তা করে আসছে।
বাকিরা ঢাকার হাসপাতাল, মসজিদ ও জনবহুল এলাকায় গাড়ি ও রাস্তায় মোবাইল ছিনতাই ও চুরি করে সাইফুল ও তৌহিদুলকে দিয়ে মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করিয়ে নিতো।
আইএমইআই পাল্টানো মোবাইল অপরাধীর হাতে:
ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তারে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। তবে আইএমইআই পরিবর্তন করা এসব মোবাইলে কোন অপরাধ হলে তাৎক্ষনিক তার পরিচয় জানা সম্ভব হয়না। ফলে এসব মোবাইলগুলো অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঝামেলায় পড়তে পারেন নির্দোষ ব্যক্তিও:
চক্রটিকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তে দেখা গেছে, একাধিক ফোনের একই আইএমইআই নাম্বার দেওয়া হয়েছে। এরফলে কোন একটি মোবাইলে অপরাধ সংগঠিত হলে প্রাথমিকভাবে বিপদে পড়তে পারেন একই আইএমইআই নাম্বারের অন্য ব্যক্তিও।
ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি চোরাই মোবাইলে আইএমইআই বসানোর জন্য র্যানডমলি ১৩ সংখ্যার একটি নাম্বার বসিয়ে দিতেন। এরফলে এমনও হতে পারে কোন ব্যক্তি দোকান থেকে দামী একটা মোবাইল কিনেছে, তার মোবাইলের আইএমইআই এর সঙ্গে ওই চক্রের দেওয়া আইএমইআই নাম্বার মিলে গেলো। পরবর্তীতে ওই মোবাইলে কোন অপরাধ হলে এমন ব্যক্তিও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারেন যিনি কোনভাবেই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না।
এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মোবাইল চুরির পর আইএমইআই নাম্বারই পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে। এমন একটি চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য নিজেরা ল্যাব বানিয়েছে। তারা চোরাই মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করা এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়:১৪১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
পিএম/এমএম