রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. আমির হোসেন কর্তৃক লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক।
গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বালিয়াকান্দি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস রুমে এ ঘটনা ঘটে।
ভোক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন, দৈনিক বাংলা ৭১ রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি মিঠুন গোস্বামী ও জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি মো. রিয়াদ হোসেন।
এ ঘটনায় সোমবার রাত ৮টায় সাংবাদিক মিঠুন গোস্বামী বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে দেখা যায়, সাব-রেজিস্টার কাছে অনৈতিক অর্থ লেনদেনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, টাকা কি আপনার বাবার কাছ থেকে এনে দেয়। আপনি কোনো ধরনের অভিযোগ করছেন। বের হন, আপনাকে ডাকছে কে? বের হন, এখান থেকে। দুই কলম পড়ে এসে নাম লিখতে পারেন না, আসছে সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকদের অবস্থান এখন কই, ভালোই জানি। মাথা ঝুলাচ্ছেন কেন আপনি? মোবাইল দিয়ে কি রেকর্ড করেন? আপনি কার পারমিশন নিয়েছেন। এই মোবাইলটা নাও তো। এই দরজা আটকানতো। পিটাইয়া তারপর বের করতে হবে। এই মাসুদকে ডাক দেনতো (বালিয়াকান্দি সাবরেজিস্ট্রার দলিল লেখক ও ভেন্ডার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ)। ।
সংবাদ কর্মী মিঠুন গোস্বামী বলেন, বালিয়াকান্দি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ শেষে সাবরেজিস্ট্রার কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাৎকার চাইলে তিনি সাংবাদিকতা নিয়ে উপহাস করেন এবং আমিসহ আরেকজন সহকর্মীকে আটকে রেখে দরজা বন্ধ করে পিটানোর হুমকি দেন। যার ভিডিও রেকর্ড রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বালিয়াকান্দি সাব রেজিস্টার অফিসের পরতে পরতে দুর্নীতি। ঘুষ ছাড়া কোনো একটি কাজ
এখানে স্বপ্নের সমান। দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারি রাজস্বের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়া হায়ার ভ্যালু, হেবা ঘোষণাতেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি মোটা অঙ্কের টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে উচ্চমানের জমিকে নিম্নমানের উল্লেখ করে দলিল সম্পাদন করার। যা উদ্দেশ্য সরকারের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া। জমির শ্রেণি পরিবর্তনে সরকারের বিশাল রাজস্ব ফাঁকি দিলেও সাব-রেজিস্টার ও সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে কথিত সেরেস্তার নামে টাকা আদায় এবং পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের ম্যারাথন অভিযোগ।
জমি রেজিস্ট্রেশন করতে সরকারি ফি ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু বালিয়াকান্দি সাব রেজিস্টার অফিসে সরকারি নিয়ম চলে না। চলে দলিল লেখক সমিতির নিয়ম। এখানে রেজিস্ট্রেশনে নেওয়া হয় লাখে ১২ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত। অঞ্চল এবং ব্যক্তি ভেদে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, আমরা এখানে অসহায়, আমাদের কিছু করার নাই। আমরা যদি দলিল প্রতি নির্ধারিত অতিরিক্ত টাকা হিসাব করে বুঝিয়ে না দেই তাহলে দলিলই গ্রহণ করবে না, সাইন তো দূরের কথা। তখন না খেয়ে মরতে হবে। তাই সব কিছু মেনে নিয়েই পেটের দায়ে কাজ করে যাচ্ছি।
ভুক্তভোগীরা জানান, সাফ কবলা দলিল, হেবা ও দানপত্রসহ যে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারি ফির বাইরে দলিল দাতা ও গ্রহীতাকে বাড়তি টাকা খরচ গুনতে হয়।
ঘুষের আদায়কৃত অর্থ সাব-রেজিস্টার, তার কর্মচারী ও দালালদের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর নির্ধারিত হারে ভাগ করা হয়। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো একটি দলিল নিবন্ধন হয়েছে এমন উদাহরণ নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তার এমন ব্যবহারে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাজবাড়ী জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাজেদুর রহমান বলেন, আমাদের সাব-রেজিস্টারদের সঙ্গে মিটিং আছে। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এসএম