ঢাকা: শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা (এমপি)৷
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই হবে।
বুধবার(১৩ সেপ্টেম্বর) ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল, ২০২৩' পাসের ওপর আলোচনায় তিনি এ কথা জানান৷ পাসের জন্য এ বিলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে উত্থাপন করেন।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের এমপিরা অভিযোগ করেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কারণ পুলিশ এখনো জনবান্ধব হতে পারেনি। এসময় পুলিশের হাতে ছাত্রলীগ নেতাদের নির্যাতন এবং আদালত চত্বরে আইনজীবীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা উল্লেখ করেন তারা।
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যেই অপরাধ করুক, শাস্তি কিন্তু পেতে হয়। আপনারা যে পুলিশ অফিসারের কথা বলেছেন, তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে নন। তার ব্যাপারে ইমিডিয়েট যে ব্যবস্থা, সেটা নেওয়া হয়েছে। এখন তার শাস্তির ব্যবস্থাটা, যেহেতু মামলা হয়নি। এখনো কেউ মামলা করেনি। আমাদের তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তার শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই হবে।
এর আগে ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঢাকায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন করা হয়, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে যারা অনুগত তাদের ঢাকায় পদায়ন করা হয়। তারপরও এমন কর্মকর্তা ঢাকায় কীভাবে আসে? হিন্দি সিনেমার মতো কোনো এক কর্মকর্তা তার অবৈধ প্রেমের কারণে ছাত্রলীগের নেতাদের থানায় পুলিশের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে সাত-আটজনে মিলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। এটা সিনেমাকে হার মানিয়েছে। এটা অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা। পুলিশের হেফাজতে নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিককে নির্যাতন করে, তাও সরকার দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের যদি নির্যাতন করে, তাহলে দেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবস্থাটা কী? আমি জানি না কেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করে নাই। শুধু তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলে সুবিচার হবে না। সুবিচার হবে ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করে ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে বিচার করে সাজার ব্যবস্থা করলে। যাতে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল পুলিশ অফিসার ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে, রাষ্ট্রের বেতন নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, এটা অন্তত বন্ধ করেন।
গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এনআইডি নিয়ে মানুষের অনেক ভোগান্তি রয়েছে। এটা নিয়ে মানুষের অনেক সমস্যা আছে। এটা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে গেলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। কারণ এখনো পুলিশ প্রকৃতপক্ষে জনগণের বন্ধু হতে পারেনি। জন্ম নিবন্ধন তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করে না। এটি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাহলে জন্মের পরেই নাগরিকত্ব আইডি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন৷ এটি করতে গেলে জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বেশ কয়েকটি কর্তৃপক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ইসির কাছে থাকা নাগরিকের তথ্য যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। ভোটার তালিকা করার স্বাধীনতা ইসির। নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল হবে। এর আগে এ আইনটি কার্যকর হলে ভোটার তালিকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।
জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, পুলিশকে আইনজীবীদের পেটাতে দেখা গেছে। তাদের অপরাধ জানা যায়নি। তারা সরকার বিরোধী হতে পারেন। আইনজীবীদের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে সরকারের সতর্ক থাকা উচিত৷ পুলিশকে ওই কৌশলটা বের করতে হবে। কীভাবে চাপ না দিয়েও পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, পরিস্থিতি শান্ত করা যায়। আইনজীবীর গায়ে হাত তোলা গর্হিত কাজ ৷ পুলিশকে এক সময় আইনজীবীর মাধ্যমে ন্যায়বিচার চাইতে হবে, তাই তাদের সম্মান জানানো উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এসকে/এসআই