ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জমি কিনতে ডেকে দামি ঘড়ি কেনার ফাঁদে ফেলেন তারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
জমি কিনতে ডেকে দামি ঘড়ি কেনার ফাঁদে ফেলেন তারা

ঢাকা: চাঁদপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জমি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেন। জমি কেনার আগ্রহ দেখিয়ে তাকে উত্তরার অফিসে ডেকে পাঠায় কথিত প্রতিষ্ঠান রয়েল চিটিং ডিপার্টমেন্ট (আরসিডি)।

সেখানে গিয়ে জমি কেনা-বেচার কথাবার্তার মধ্যেই আসে দামি রোলেক্স ঘড়ির ব্যবসার বিষয়টি। ভারতীয় পার্টনারের সঙ্গে ঘড়ির ব্যবসায় লগ্নি করার কথা বলে তাদের সামনেই একজন ৩৫ লাখ টাকার বান্ডিল দিয়ে চলে যান।

সাইফুলকেও ঘড়ি ব্যবসার পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর এতেই জমি বিক্রির পাশাপাশি ঘড়ির ব্যবসায় লাভের প্রলোভনে পড়েন তিনি।

সঙ্গে যাওয়া ভায়রা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে আলাপ করে সাইফুল সরল বিশ্বাসে পরদিন ঘড়ির ব্যবসার জন্য ২০ লাখ টাকা নিয়ে অফিসে যান।

পরদিনই জমি রেজিস্ট্রির কথা ছিল। সেদিন থেকে চক্রের সবার নম্বর বন্ধ। পরে উত্তরার অফিসে গিয়ে চক্রের এক সদস্যকে পেয়ে আটক করে থানা পুলিশের খবর দেন সাইফুল।

এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল মান্নান। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ওই মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।

তদন্তের ধারাবাহিকতায় শনিবার উত্তরা থেকে এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- আব্দুল বারী ওরফে আফসার উদ্দিন খাঁন ওরফে বজলুর রহমান মাসুদ (৬৬), রাশেদ ওরফে রাসেল (৩৭) ও মো. নাঈম (৪৩)।

পিবিআই জানায়, বহুমাত্রিক ব্যবসার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের হোতা আব্দুল বারী ওরফে আফসার উদ্দিন খাঁন ওরফে বজলুর রহমান মাসুদ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাইফুল ইসলাম ২৬ শতক জমি বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার শরীফ নামে একজন জানান, তার মালিক আফসার উদ্দিন খাঁন জমি কিনবেন। সাইফুলকে জমির কাগজপত্র নিয়ে উত্তরার একটি বাড়িতে যেতে বলেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম ও আব্দুল মান্নান গত ১৭ জুলাই দুপুরে নির্ধারিত বাসায় গেলে জমির মূল্য নির্ধারিত হয়। জমির মূল্য নির্ধারণের পর ১৯ জুলাই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য দ্বিতীয় পক্ষের যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।  

কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন হঠাৎ করে আফসার উদ্দিন খাঁনকে বলেন, তার মালিক ভারতীয় নাগরিক। তিনি কিছু দামি ব্রান্ডের ঘড়ি ক্রয় করবেন। ঘড়ি দিতে পারলে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার নগদ ব্যবসা হবে।

তখন মূলহোতা আফসার ও মোয়াজ্জেম ভারতীয় নাগরিক ওই মালিককে আসতে বলেন। প্রায় আধা ঘন্টা পর এক লোক আসেন। তাকে ভারতীয় নাগরিক ও ঘড়ি কেনার জন্য এসেছেন মর্মে পরিচয় করে দেওয়া হয়।

ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঘড়ির ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে মূলহোতা আফসারকে ঘড়ি কেনা বাবদ অগ্রিম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা দেন এবং অবশিষ্ট টাকা পরদিন ১৮ জুলাই পরিশোধ করে ঘড়ি বুঝে নিয়ে যাবেন বলে চলে যান।

পরে আব্দুল মান্নানকেও এই ঘড়ির ব্যবসায় পার্টনার হবার প্রস্তাব দেন আফসার উদ্দিন খাঁন। পার্টনার হতে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আমদানিকারক ঘড়ি সরবরাহ করবেন এবং সবাই সমানভাবে ব্যবসায় লাভবান হবেন।

সরল বিশ্বাসে ও তাদের আপ্যায়ন ও সমাদরে মুগ্ধ হয়ে আব্দুল মান্নান ও সাইফুল ইসলাম পরদিন দুপুরে একই স্থানে নগদ ২০ লাখ টাকা আফসারের হাতে তুলে দেন।

এর পরদিন জমি রেজিস্ট্রেশেন হওয়ার কথা। সেদিন কল দিয়ে সাইফুল ও মান্নান সবার নম্বর বন্ধ পান। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মোয়াজ্জেমকে হাতেনাতে আটকে রেখে বিমানবন্দর থানায় খবর দেন তারা। পুলিশ এসে মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে।

বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মামলায় মোয়াজ্জেমকে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পিবিআই মামলার তদন্তভার পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হন। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পিবিআইয়ের বিশেষ এই পুলিশ সুপার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
পিএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।