ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদরাসা সুপারকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ, উদ্ধার করল পুলিশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩
মাদরাসা সুপারকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ, উদ্ধার করল পুলিশ মেয়র মাহবুবুল হক বাচ্চু

পাবনা: দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পাবনার সাঁথিয়ায় আব্দুল বারি নামে মহিলা মাদরাসার সুপারকে আটকে রেখে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছে মেয়র মাহবুবুল হক বাচ্চুর বিরুদ্ধে।  

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল হক বাচ্চুর কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

পরে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুল বারি পাবনা সদরের ভাঙ্গাবাড়িয়ার আব্দুল গফুর জোয়ার্দারের ছেলে ও সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপার।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া পৌরসভাধীন বালিকা দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে একটি এডহক কমিটি গঠন করা হবে। বিষয়টির প্রক্রিয়া শেষের দিকে। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপির ছেলে, বেড়া পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট আশিফ শামস রঞ্জন সাঁথিয়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সোহের রানা খোকনকে এডহক কমিটিতে সভাপতি মনোনয়ন দিতে বলেন। এই নিয়ে গত এক বছর ধরে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল হক বাচ্চু ম্যানেজিং কমিটির এডহক কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য জোর তদবির চালান। আজকে সকালে সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসায় পৌরসভার কর্মচারীকে পাঠিয়ে মাদরাসার সুপারকে মেয়রের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসা হয়। এসময় মেয়র তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তাকে সভাপতি বানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এরপর মেয়রের পাশের রুমে নিয়ে মেয়রের সহযোগী সাদ্দাম ও বিষু সুপার আব্দুল বারীকে মারধর করেন ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন। এ সময় মাদরাসার অফিস সহকারী মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সাঁথিয়া থানায় ফোন করেন। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মাদরাসার সুপার আব্দুল বারিকে উদ্ধার করে। আব্দুল বারীকে উদ্ধার করে সাঁথিয়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুল বারি বলেন, আজকে সকালে পৌর মেয়রের কার্যালয় থেকে লোক পাঠিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মেয়র সাহেব আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে অন্য রুমে নিয়ে আমাকে নির্যাতন ও সভাপতি বানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এরপর মাদরাসার অফিস সহকারী থানায় মোবাইল করে ঘটনা জানান। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।  

তিনি আরও বলেন, মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের জন্য এডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এমপির সহোদরের ছেলে ও বেড়া পৌর মেয়র সাঁথিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকনকে সভাপতি করার কথা বলেন। আমরা নিয়মের প্রক্রিয়ায় এডহক কমিটি গঠনের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু মেয়র সাহেব সভাপতি হওয়ার জন্য আমাকে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ, লাঞ্ছিত ও নির্যাতন করেন।  

এর আগে গত ৬ জুলাই পৌর মেয়র তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করেছিলেন। আজকে আমার কাছে পুলিশ আসছিল। তারা সব শুনে গেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই আমি। আগামীকাল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।

অভিযুক্ত সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু বলেন, এসব ঘটনা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সকাল ১০টায় আমি ইউএনও অফিসে ছিলাম। আমাকে যারা দেখতে পারেন না তারা আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছেন।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আগে থেকেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আজকে সকাল ১০টার দিকে মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু মাদরাসা সুপারকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তবে ঘটনা অন্য কিছু থাকতে পারে সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সঠিক ঘটনা বের করা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় এসপি স্যার আমাদের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্ববর ১৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।