ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কোরাম সংকটে সংসদ অধিবেশনে অপচয় ৮৯ কোটি টাকা

সিনিয়র করেপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৩
কোরাম সংকটে সংসদ অধিবেশনে অপচয় ৮৯ কোটি টাকা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর সংবাদ সম্মেলন | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কোরাম সংকটের কারণে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট ব্যয় হয়েছে। ব্যয়িত সময়ে সরকারের অপচয় হয়েছে ৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার টাকা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্টওয়াচ: প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশন (জানুয়ারি ২০২৯-এপ্রিল ২০২৩)‘ পর্যন্ত সময়ের সংসদের অধিবেশনের কার্যাবলি পর্যালোচনা নির্ভর এ গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চাচলায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন রাবেয়া আক্তার।

টিআবির পর্যালোচনায় উঠে আসে, চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে অধিবেশনে কোরাম সংকটে ৮৪ শতাংশ কর্মদিবসে যথাসময়ে সংসদ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এবং বিরতির পর কোনো দিনই নির্ধারিত সময়ে অধিবেশন শুরু করা যায়নি। এটা আগের বছর সংসদ অধিবেশনগুলোর চেয়ে কম। তবে এ সময়ে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার কারণে সংসদ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হতে পারেনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কার্যকর বিরোধী দল না থাকার কারণে বর্তমান সংসদ কার্যকর হয়নি। সংসদীয় কার্যক্রমে বিষয় ভিত্তিক, প্ৰাসঙ্গিক ও গঠনমূলক আলোচনার পরিবর্তে সরকার ও দলীয় অর্জন ও প্রশংসা এবং প্রতিপক্ষ দলের প্রতি আক্রমণাত্মক সমালোচনার প্রাধান্য দেখা গেছে। বরাবরের মতোই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বিশ্লেষণ ও জবাবদিহি অনুপস্থিত ছিল। স্বল্প সময়ের মধ্যেই নামমাত্র পরিবর্তন-পরিমার্জন করেই বাজেট ও অর্থবিল করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সংসদে বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা দেখা যায়নি।

পূর্বের সংসদগুলোর চেয়ে আইন প্রণয়নে গড় সময় বৃদ্ধি পেলেও সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশংহণ ও গঠনমূলক বিতর্কের ঘাটতি ছিল। আইন প্রণয়নে সরকারি দলের অধিকাংশ সদস্যের অংশগ্রহণ শুধুমাত্র বিলের পক্ষে ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে, বলেন ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির সুপারিশ
* জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাস্তবিক অর্থে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হতে হবে, বিরোধী দলের শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে।

* সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছে সংশোধন করতে হবে, যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে অনাস্থার ভোট এবং বাজেট ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে সদস্যদের নিজ বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

* সরকারি দলের এককেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বিরোধী দলের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

* ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন’ গ্রহণ করতে হবে, যেখানে সংসদ সদস্যদের আচরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে নির্দেশনা থাকবে।

* সংসদে অধিকতর শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।

* অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা এবং অহেতুক প্রশংসা ও সমলোচনা না করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে কার্যকর অংশগ্রহণ ও ফলপ্রসূ আলোচনা নিশ্চিত করতে দলীয় প্রধান ও হুইপকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

* সংসদীয় কার্যক্রম বিষয়ক পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং সেখানে সদস্যদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

* রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের সার্বিক অবস্থার পর্যালোচনা ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।

* এসডিজি বাস্তবায়নসহ আন্তর্জাতিক সব চুক্তি আলোচনার জন্য সংসদে উপস্থাপন করতে হবে।

* আইনের খসড়ায় জনমত গ্রহণের জন্য অধিবেশনে উত্থাপিত সব বিল সংসদের ওয়েসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

* সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠক ও প্রতিবেদন প্ৰণনয়ন ও প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে।

* সংসদ অধিবেশন ও কমিটির বৈঠকে সদস্যদের উপস্থিতির তথ্য পৃথকভাবে অ্যাশবোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। সকল সংসদ সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ হলফনামা এবং সম্পদের হালনাগাদ তথা সংসদ ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সমূহের কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিবেদন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকাশযোগ্য নয়, এমন বিষয় ছাড়া অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।