ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চাঁদপুরে মাদক কারবারে অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৩
চাঁদপুরে মাদক কারবারে অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ   সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক পিয়ার হোসেন ও পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) সেন্টু রঞ্জন নাথ (বাঁ থেকে)

চাঁদপুর: জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে যারা রক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের মধ্যে তিন কর্মকর্তা ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে অবাধে মাদক কেনাবেচা করছে মাদককারবারিরা।

 

চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা মাদক কেনাবেচার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত অভিযোগে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।  

অভিযুক্তরা হলেন- চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক পিয়ার হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম ও পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) সেন্টু রঞ্জন নাথ।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়। একইসঙ্গে অভিযোগের অনুলিপি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকায় মহাপরিচালক (ডিজি) ও পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) বরাবর পাঠানো হয়।

এছাড়াও এ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে শহরের ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অধিদপ্তরের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই তিন কর্মকর্তা শহরের একাধিক মাদককারবারিদের সঙ্গে জড়িত। অভিযানের আগে তারা মোবাইলফোনে কারবারিদেরকে জানিয়ে দেন। যে কারণে অভিযান করেও সফলতা পাওয়া যায়নি। তাদের কারণে অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

কিন্তু অভিযোগের পরও এ বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যে কারণে ওই তিন কর্মকর্তা চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে আছেন।

আরও অভিযোগ রয়েছে, মাদককারবারিদের সঙ্গে গোপনে সখ্য গড়েছেন সেন্টু, পিয়ার ও সাইফুল। যার কারণে মাদকের বড় ধরনের কোনো মামলা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।  

একইসঙ্গে মাদককারবারিদের কাছ থেকে তারা মাসিক হিসেবে নগদ অর্থ গ্রহণ করতেন বলেও কয়েকজন কারবারি অভিযোগ করেছেন।  

শুধু তাই নয়; এই তিনজন সংঘবদ্ধভাবে মাদক বিক্রি করার জন্য কারবারিদের বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে অনুসন্ধানে গিয়ে কথা হয় একাধিক মাদকবিক্রেতার সঙ্গে। তাদের সবার বক্তব্যে এই তিন কর্মকর্তার নাম এসেছে।  

চাঁদপুর শহরের আদালাতপাড়া এলাকার অন্যতম মাদকবিক্রেতা দেওয়ান মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি এক সময়ে মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু আমার সন্তানরা বড় হওয়ার পর এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এরপরও ভালো থাকতে পারেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা সাইফুল, পিয়ার ও সেন্টু আমাকে মাদক বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন। সাইফুলের বাড়ি কুমিল্লা হওয়ার কারণে তিনি সেখান থেকে মাদক নিরাপত্তা দিয়ে এনে আমাকে দিয়ে বিক্রি করিয়েছেন। এজন্য তারা আমার কাছ থেকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা নিতেন। তাদের কারণে আমি চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জ গিয়ে বাসা নিয়েছি। সেখানে গিয়েও তারা আমার সঙ্গে মাসিক নির্ধারিত টাকা না দেওয়ায় সমস্যা করে এবং আমাকে মাদক দিয়ে চালান দেয়। তারা তিনজন খুবই খারাপ। তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

শহরের কয়লা ঘাট এলাকার লোক কলোনির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স রিপন ঢালী জানায়, আমি দীর্ঘদিন সোর্স হিসেবে কাজ করি। সম্প্রতি সাইফুল, পিয়ার ও সেন্টু এই তিন কর্মকর্তা মাদকবিক্রেতা রানা, রহিমসহ তার সহযোগীদের টাকা খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এছাড়া শহরের খুচরা মাদকবিক্রেতা ক্লাব রোডের জোনাকি, আল-আমিনের স্ত্রী, লেংড়ি খালা,  রাজিব, লাকী, রানা, বারেক ও জসিম মিজি থেকে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে নেয়। তাছাড়া মাদকবিক্রেতা শাহাজাহান ঘর থেকে ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পেয়ে না এনে ১ লাখ টাক নিয়ে আসে ওই তিন কর্মকর্তা।

শহরের জামতলার চিহ্নিত মাদকবিক্রেতা শাহজাহানের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার পুতুল জানান, আমার স্বামী মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন নেই। আমার স্বামী মাদক খায়, কিন্তু বিক্রি করে না। যখন বিক্রি করেছে তখন মাদক অফিসের কর্মকর্তা সাইফুল, পিয়ার ও সেন্টু মাসিক টাকা নিতেন। এখন মাসিক টাকা না দেওয়ায় বিভিন্নভাবে হয়রানি ও মামলার হুমকি দিচ্ছে।

এদিকে অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা সাইফুল, পিয়ার হোসেন ও সেন্টু রঞ্জন দেবনাথের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি।  

পরে রোববার (১ অক্টোবর) অফিস চলাকালীন চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অপারেশন কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও তাদের দেখে মেলেনি। যে কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপরেও তাদেরকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অফিস সহকারীর কাছে প্রতিবেদক নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসেন। এখন অবধি তারা যোগাযোগ করেননি।

মাদক কারবারে অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা জড়িত অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলমের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, আমি এ জেলায় আগেও ছিলাম। চলতি বছরের জুন মাসে এসে আবার যোগদান করেছি। এখানকার প্রশাসন ও অন্যান্য লোকজন আমার পরিচিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমার কাছে বিভিন্নভাবে অভিযোগ আসতে থাকে। এগুলো আমার কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে আমাকে লিখিত অভিযোগের পরামর্শ দেওয়া হয় এবং গত ১৩ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাই। অধিদপ্তর তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি দেখবেন। তবে অভিযোগ দেওয়ার পরে তারা নিজেদের রক্ষায় সংঘবদ্ধ হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এই বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক জাফর উল্যাহ কাজল বলেন, এইসব অভিযোগের বিষয়ে আমাদের প্রধান দপ্তর কাজ করছে। আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।  

এরপর লাইন কেটে দেন অতিরিক্ত পরিচালক জাফর উল্যাহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।