ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৩০০ কোটি টাকায় ‘এমপি পদ’ দিতে চেয়েছিলেন হানিফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৩
৩০০ কোটি টাকায় ‘এমপি পদ’ দিতে চেয়েছিলেন হানিফ

ঢাকা: আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া (৩৯) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১। পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর দাবি তুষার একজন প্রতারক।

তিনি ৩০০ কোটি টাকার বিনিময়ে ‘জাতীয় সংসদ সদস্য পদ’ বিক্রি করতে চেয়েছিলেন।

শুধু তা-ই নয়, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বা পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে বিপুল অংকের অর্থ দাবি করতেন তুষার। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবসাও করতে চেয়েছিলেন তিনি। এসব অপকাণ্ডে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অভিযানে তার কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, অ্যামুনেশন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ও বিভিন্ন ভিডিও এবং এডিট করা ছবি জব্দ করা হয়। তুষারের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা উপজেলায়।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতেন তুষার। যাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ তাদের ‘লক্ষ্যবস্তু’ করতেন তিনি। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে কারও কাছে ৫০, কারও কাছে ১০০ আবার কারও কাছে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করতেন।

টার্গেটের ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখাও করতেন তুষার; কখনও দামি গাড়িতে চড়ে নয়ত কোনো তারকা হোটেলে। মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন তুষারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলেও র‌্যাব জেনেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি-রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেওয়াসহ নানা প্রতারণা করে ৩০ জনের বেশি মানুষের কাছে থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বেশি লুটে নিয়েছেন তুষার।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারণার জন্য তুষার বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতেন। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন বেনামি মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে নিজে বা চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করবো। বার্তা মাধ্যমেই তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার মতো অপকাণ্ড করতে চেয়েছিলেন।

মানুষের কাছে নিজে বিশ্বাসী করে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করতেন তুষার। এসব তিনি তার লক্ষ্যবস্তুতে আসা লোকেদের কাছে পাঠাতেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে সেসব ছবি তুলে টার্গেটেড ব্যক্তিদের দেখাতেন। ঢাকার নাখালপাড়া ও ধানমন্ডি এলাকায় দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বলেও দাবি করতেন তিনি।

খন্দকার আল মঈন জানান, তুষার নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও মিথ্যাচার করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি মোটরপার্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরিবহণ সেক্টরে দেশের বিভিন্ন রুটে তুষার এন্টারপ্রাইজ পরিবহন নামে তার বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে।

২০১৪ সালের পর থেকে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করেন তুষার। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসেন তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পত্তির মালিক হওয়া, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছিলেন তুষার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৩
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।