ঢাকা: সাংবাদিকদের ওপর হামলার জন্য বিএনপির ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্পাদকরা। একইসঙ্গে দেশের যেকোনো পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (১ নভেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকরা এসব কথা জানান।
ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সেদিন (২৮ অক্টোবর) অনেক সাংবাদিক যেমন আহত হয়েছেন, গণমাধ্যমের অনেক যানবাহনও ভাঙচুর হয়েছে। আমরা একদিকে দেখেছি প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, একজন পুলিশকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, হাসপাতালের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন আমাদের সাংবাদিকরা যখন এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির সংবাদ পরিবেশন করা করার জন্য দায়িত্ব পালন করতে যান তখন তাদের ওপরে এ ধরনের আক্রমণ, আমরা মনে করি সংবাদপত্রের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে এক ধরনের আক্রমণ।
ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে সুস্থ সাংবাদিকতা হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে, সেখানে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবে। আর আমাদের দায়িত্ব হলো সেই সংবাদগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে পরিবেশন করা। সেখানে যদি আমরা বাধাগ্রস্ত হই, অথবা আমাদের যদি লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়, আমাদের যানবাহন যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কিন্তু গণমাধ্যমে একটি ভীতির সৃষ্টি হয়।
এ সময় তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়ই আমরা আপনাদের কাছে দাবি জানাব, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে আমাদের দায়িত্ব পালনে অর্থাৎ সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় এবং কোন আক্রমণ যেন আমাদের ওপর না হয়। সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি।
ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, মিডিয়াকে টার্গেট করে আক্রমণ হয়েছে, আমরা এর প্রতিবাদও করেছি। আমরা তিনটি দাবি দিয়ে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম- সাংবাদিকদের ওপর হামলার জন্য বিএনপির ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক ও জনগণকে মারার কারও রাইটস আছে? যারা মানবাধিকার নিয়ে কথায় কথায় এত প্রতিক্রিয়া দেয়, আজ এটা ভায়োলেশন কি না আমরা তো বুঝতে পারছি না। তাই আমাদের তরফ থেকে ও সরকারের তরফ থেকে জোরালো বক্তব্য আসা উচিত। পুলিশকে বর্বরভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের সহকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। যারা যে ধরনের কর্মসূচি পালন করুক না কেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় যেন গুরুত্ব দেয়, সেই আহ্বান জানাব।
আমাদের নতুন সময়ের প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ২৮ অক্টোবর এবং এর পর যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সমন্বিত তালিকা করা যায় কি না, যারা কাজ করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন তাদের তথ্যও সেখানে থাকবে। মানবাধিকার সংগঠনের কাছে এই তালিকা পাঠানো যাবে। প্রেসের ড্রেস পড়ে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টিও ডকুমেন্টেশনে থাকবে।
প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ করে ফেলা হয়েছে, আমরা এরপরও কিন্তু ভয় পাব না। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব। আমাদের দাবি, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমি সাংবাদিক হিসেবে গণতন্ত্রের বিকাশে কাজ করছি, আমাকে নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্র দেবে, এটা আমার অধিকার।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ডেইলি পিপলস লাইফের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভোরের ডাকের সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন, বাংলাদেশ বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন, আজকালের খববের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, সংবাদ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিমন মাহফুজ, প্রতিদিনের সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশের আলোর সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, বাংলাদেশ টুডের সম্পাদক জোবায়ের আলম, আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল আলম এবং দৈনিক ভোরের আকাশের উপদেষ্টা সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ