ঢাকা: ‘সরকার যারাই গঠন করুক, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যেন আমাদের মত সাধারণ মানুষ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারি। এর বেশি আমাদের কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই।
রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এর ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলছিলেন ঢাকার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি মো. সেলিম মিয়া।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেছেন ২২৪ জন। সরকার গঠন করতে জাতীয় সংসদের ১৫১টি আসন পেতে হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের দল আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ফলে দলটিই টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করার পথে। সেক্ষেত্রে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
যদিও বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে এক হাজার ৫৩২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ‘শান্তিপূর্ণ’ এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১১ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন, যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা।
এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সাধারণ মানুষ নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, আর বিএনপি সমর্থকরা প্রকাশ করেছেন হতাশা ও ক্ষোভ।
অনেকে বলছেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মতে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং সে হিসেবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অনিয়মের খবর মেলেনি। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী সমর্থকরা নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মনে করছেন না। তাদের মতে, নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল না। ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। এতে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এক প্রকার প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচনের ফলাফল দেশে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, সে বিষয়ে সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে বাংলানিউজ।
শাহজাহানপুর এলাকায় বাসিন্দা আওয়ামী লীগ সমর্থক মো. জনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসেছে। এটা জনগণের চাওয়া। জনগণ ভালোবাসে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ ভালোর দিকে যাবে। আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগ আবারও দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করবে। ’
রোববারের ভোট পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মিরপুরের বাসিন্দা সাইফ আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি কোনো ধরনের ঝামেলা ছিল না, পরিবেশ সুন্দর ছিল। তবে ভোটারদের কোনো লাইন দেখিনি। ভোটাররা সময় নিয়েই এসেছেন, ভোট দিয়েছেন। আর ভোটারদের অধিকাংশের আগ্রহ দেখে বোঝা গেছে, তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নৌকাকে ভালোবাসেন। ’
আওয়ামী লীগের জয়ে এমন অনেক ভোটার খুশি হয়েছেন। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে উন্নয়ন হয়েছে। তারা এবারও দেশকে এগিয়ে নেবে।
অন্যদিকে নির্বাচনের সমালোচনাও করেছেন বিএনপি সমর্থক কয়েকজন। রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা মো. সোলাইমান সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল না। তাই আমরা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে পারছি না। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য দেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই নির্বাচনের ফলে দেশের গণতন্ত্র আরও দুর্বল হবে। ’
কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান বলেন, ‘আমরা এই একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে মানি না এবং স্বীকৃতিও দেই না। এটা কোনো নির্বাচন নয়। সরকার যদি দেশের মঙ্গল করতে চায় এবং গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে চায় তাহলে অবশ্যই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অতি দ্রুত একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ’
নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন হলে সাধারণ মানুষের আশা কতটা পূরণ হবে এবং সাধারণ মানুষ কী চাচ্ছে এ বিষয়ে রাজমিস্ত্রি মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘গতকালের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও অতীতের নির্বাচনগুলোর আগে-পরে যে উৎসবের আমেজ থাকতো তা এবার ছিল না। বিএনপি নির্বাচনে এলে এমনটা হয়তো হতো না। তবে নির্বাচন যেমনই হোক, আমরা সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে আছি। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে আমাদের চলা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাজমিস্ত্রির কাজ করে ঢাকায় নিজের খরচ চালিয়ে গ্রামের বাড়িতে ভালো করে টাকাও পাঠাতে পারি না। ’
তিনি বলেন, ‘সরকার যারাই গঠন করুক, এতে জনগণের কোনো আপত্তি নেই, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যেন আমাদের মত সাধারণ মানুষ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারি। এর বেশি আমাদের কিছু চাওয়া পাওয়া নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৪
ইএসএস/এইচএ/