ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরাধিকারে নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করার দাবি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৪
উত্তরাধিকারে নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করার দাবি 

ঢাকা: নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকায় নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার এটি শুধু আজকের দাবি না বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যেই নিহিত। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।  

রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘বৈষম্য দূর করার জন্য উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তারা।  

বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, ল’ কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান আবেদা সুলতানা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাবরিনা জারিন, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ সুমী।  

 ড. মিজানুর রহমান বলেন, নারীরা নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত। আজও কেন এত নারীরা ভূমিহীন শুধু আইন পরিবর্তন বা সংশোধন যথেষ্ট হবে কিনা, তা নিয়ে ভাবার দরকার। আইন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আইনি সহায়তা কীভাবে দেওয়া হবে, সামাজিক আন্দোলনে পরুষের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা কেমন হবে, কীভাবে পরুষদের সম্পৃক্ততার বৃদ্ধি করা যায়, এই সকল বিষয়েও চিন্তা করতে হবে।

বিচারক আবেদা সুলতানা বলেন, এখনো আইনে যেটুকু আছে সেটুকুও নারীকে প্রদান করা হয় না। নারীদের তার নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সম-অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করাসহ সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।  

ব্যারিস্টার সাবরিনা জারিন বলেন, বৈষম্যমূলক উত্তারাধিকার আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবর্তন না হওয়ার পেছনে পুরুষতান্ত্রিক মন মানসিকতাই দায়ী। আর নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন সরাসরি পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকার না থাকার বিষয়টি জড়িত।

ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরাও সমানভাবে অবদান রেখেছেন। তাহলে নারীর অধিকার কেন সমান হবে না স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও দেশে ১৯৩৭ সালের আইন বহাল রয়েছে। তাই উত্তারাধিকার আইনসহ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি আইনগুলো পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি।  

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী পারিবারিক আইনটি প্রণীত হয়েছে। তা এখনো কার্যকরী আছে। যা নারীর জন্য বৈষম্য ও নির্যাতনের উৎসে পরিণত হয়েছে। অথচ সংবিধান হচ্ছে, সর্বোচ্চ আইন। যেখানে জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই  সর্বজনীন পারিবারিক আইন দ্রুত প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।  

সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমানাধিকার দিয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের নারীসমাজকে ব্যাপক বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের মূল স্তম্ভ উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা। যা সমাজ-রাষ্ট্রে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনসহ চলমান বিভিন্ন উপসর্গের মূল কারণ। এই সংকট মোকাবেলায় নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৪,২০২৪
টিএ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।