ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিখোঁজ হননি বেদেনা বেওয়া, হত্যা করে লাশ গুম করেছিল ছেলের বউ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
নিখোঁজ হননি বেদেনা বেওয়া, হত্যা করে লাশ গুম করেছিল ছেলের বউ

রাজশাহী: পুঠিয়া উপজেলার থান্দারপাড়া গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর স্ত্রী ছিলেন বেদেনা বেওয়া (৫৭)। সম্প্রতি তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে খবর চাউর হয়।

কিন্তু তিনি নিখোঁজ ছিলেন না। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটান তার পুত্রবধূ। হত্যার পর তার লাশ বস্তাবন্দী করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কবরস্থানে।

গত শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে বেওয়ার বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার হয়।   সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি। এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কয়েকদিনের মধ্যেই ঘটনার লোমহর্ষক রহস্য উদঘাটন করেন বাহিনীর সদস্যরা।

পুলিশ জানিয়েছে, বেদেনা বেওয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তার পুত্রবধূ কণিকা খাতুন (২৯)। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। কণিকা ছাড়াও এ ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন নিহতের নাতনি।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে দুই আসামির একজন কণিকার সতীনের ১৪ বছরের মেয়ে ও দেবরের ১৬ বছরের ছেলে।

এর আগে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) কণিকা ও তার সতীনের মেয়েকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলে পুলিশ। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। দুজনই আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সর্বশেষ আসামি কণিকার দেবরের ছেলেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলে পুলিশ।

নিহত বেওয়ার দুই সন্তান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ছেলে ও কণিকার স্বামী রিপন আলী বাদি হয়ে মামলা করেছিলেন।

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, কোনো এক বিষয় নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে কণিকার মনোমালিন্য ছিল আগে থেকেই। ঘটনার দিনও তার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল কণিকার। এর জের ধরেই শাশুড়িকে হত্যার পরিকল্পনা করেন পুত্রবধূ। ইফতারের সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সতীনের মেয়েকে দিয়ে সেটি তার দাদীকে দিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু ওই কিশোরী তাকে মানা করে। দাদির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে জানিয়ে কণিকা তার সতীনের মেয়েকে শরবত দিয়ে আসতে পুনরায় অনুরোধ করেন। বলেন, আমি দিলে তোমার দাবি খাবে না।

এ কথা শুনে সতীনের মেয়ে দাদিকে কণিকার পাঠানো শরবত দিয়ে আসে। ইফতারে সেই শরবত পানের কিছুক্ষণ পরই বেদেনা বেওয়া ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর কণিকা ওড়না দিয়ে শাশুড়ির দুই হাত খাটের সঙ্গে বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তার দেবরের ছেলেকে ডাকেন। আগে থেকেই সে কণিকার বিশ্বস্ত ছিল। তাকে ডেকে কণিকা প্রথমে কেক খেতে দেন। এরপর তার দাদীকে হত্যার এই পুরো ঘটনা বলেন এবং মরদেহ গুম করে দেওয়ার ব্যাপারে তার সহযোগিতা চান। এরপর তিনজন মিলেই মরদেহ বস্তায় ভরে দেয়ালের ওপর দিয়ে বাড়ির পাশের কবরস্থানে ফেলে দেন তারা। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) মরদেহ পচে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে দুর্গন্ধের বিষয়টি জানান।

পুঠিয়া থানা পুলিশ ডোম ডেকে বস্তার মুখ খুলে বেদেনার মরদেহ দেখতে পায়। এই ঘটনায় পরদিন শনিবার (১৩ এপ্রিল) পুলিশ রিপন ও তার স্ত্রী কণিকাকে থানায় মামলা করার জন্য ডাকে। তারা থানায় যাওয়ার পর রিপন ও তার স্ত্রীকে পুলিশ আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে কণিকা ঘটনার কথা স্বীকার করেন। তার কথা অনুযায়ী বাড়ি থেকে তার সতীনের মেয়েকেও থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের দুজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তারা দুজনই পরদিন আদালতে গিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর সূত্র ধরে বুধবার (১৭ এপ্রিল) পুলিশ কণিকার দেবরের ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। আর সেও এতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

মামলার বাদী নিহত বেদেনা বেওয়ার ছেলে রিপন আলী পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। তিনি মাকে নিয়ে উপজেলার থান্দারপাড়ায় থাকতেন। সেদিন বাইরে থেকে বাড়ি এসে জানতে পারেন তার মা পাশের বানেশ্বর বাজারে গেছেন তার এক ভাগনেকে আনতে। কিন্তু বেদেনা বেওয়া ফেরেননি। বহু খোঁজাখুঁজি করে মাকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
এসএস/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।