ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে র্যাগিংয়ের ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় তিন শিক্ষার্থীর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি।
এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মুদাচ্ছির খান কাফি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সাগরের সম্পৃক্ততা বেশি ছিল। তাদের বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া ইতিহাস বিভাগেরই উজ্জ্বল হোসেন কম জড়িত থাকায় তাকে সতর্ক করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। অভিযুক্তরা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।
এদিকে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কারণ তারা কেউই আবাসিক শিক্ষার্থী নন। তবে হল কমিটি প্রশাসনের কাছে কয়েকটি সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।
সুপারিশের মধ্যে কাফি, সাগর ও উজ্জ্বলের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান এবং আরও তিন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করে সতর্ক করার সুপারিশ করেছে হল প্রশাসনের গঠিত কমিটি। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা সাপেক্ষে তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইবির লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) এক ছাত্রকে পরিচয়ের নামে বিবস্ত্র করে রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত র্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়।
এসময় ভুক্তভোগীর বাবা-মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে সিনিয়ররা। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে উলঙ্গ করে পর্নগ্রাফি দেখে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে নির্যাতনকারীরা। এসময় তাকে ‘নাকে খত’ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে অভিযুক্তরা।
এছাড়াও এসময় তাকে ভয় দেখিয়ে ৩/৪ বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। নির্যাতনের সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে শাসাতে থাকেন এবং ঘটনা বাইরে না জানাতে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেন। এদিকে ওই কক্ষে প্রায়ই র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে বলে সাক্ষাৎ দেওয়া শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটির কাছে জানিয়েছে।
এছাড়াও হল প্রশাসন কমিটির ৫-৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত কমিটির ১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হল প্রশাসন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে। সেই কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে তারা প্রায় দুই মাস পর সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হলটির আবাসিক শিক্ষক ড. আলতাফ হোসেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা তিন সদস্যের এ কমিটির নির্দিষ্ট সময় ছিল না। তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
হল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন হল প্রভোস্ট বরাবর জমা দিয়েছি। আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। বিধি অনুযায়ী শাস্তি দিতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়েছে।
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, তিনজনের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবর সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করেছি।
প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, আমরা ঈদের আগেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আমরা জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসন বরাবর বিধি অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৪
আরএ