ঝিনাইদহ: জন্ম থেকে দুটি হাত না থাকলেও জীবন সংগ্রামে থেমে নেই ঝিনাইদহের শিশু হাসান আলী (৯)। পা দিয়েই দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব কাজ করে সে।
জানা গেছে, জেলার হরিনাকুন্ডু পৌরসভার কাচারি পাড়ার সরকারি জায়গায় একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকে হাসান আলীর বাবা সোহেল রানাসহ তার পরিবার। জন্ম থেকে শিশু হাসানের দুই হাত নেই। তারপরও দমে যায়নি সে। অন্যান্য শিশুদের মতোই রয়েছে তার চঞ্চলতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশেই শিশু হাসান তার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে খেলা করছে। হাত না থাকলেও খেলতে পারে গাদন, ফুটবল, হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলা। লেখাপড়ায়ও পিছিয়ে নেই সে। স্থানীয় একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে হাসান। এমনকি প্রতিবন্ধী শিশু হাসানের মধ্যে রয়েছে শৈশবের সব দুরন্তপনা। অনেক কাজ নিজে করতে না পারলেও চেষ্টার কোনো কমতি রাখেন না। আর যে কাজগুলো পারে না সেই কাজে বেশিরভাগ সহযোগিতা করে তার মা। নিজে নিজেই পা দিয়ে করতে পারে গোসল, খেতে পারে ভাত। দুটি পা তার সব ধরনের কাজের সঙ্গী। তবে এই শিশুটির এমন কাজ দেখে বিস্মিত হওয়ার পাশাপাশি যে কারও হৃদয়ে নাড়া দেয়।
একটি ঘর দাবি করে প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানান, হাসানের বাবা একজন দিনমজুর ভাড়ায়চালিত অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চলে তার। নেই থাকার তেমন কোনো ঘর। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তার।
হাসান আলী জানান, আমার দুটো হাত নেই, আমি পা দিয়ে ভাত খাই। গোসল করতে পারি, লেখাপড়া করতে পারি। সব ধরনের খেলা করতে পারি, আমি বড় হয়ে স্যার হতে চাই।
হাসানের মা খালেদা খাতুন জানান, আমার সংসারে রয়েছে দুই ছেলে, এক মেয়ে, তার মধ্যে হাসানের দুই হাত নেই। আমরা ভূমিহীন, আমাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই, পরের জায়গায় থাকি, শীতের সময় কুয়াশার কারণে অনেক কষ্ট হয়। আবার গরম আসলে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে-পুড়ে বসবাস করতে হয়। আমার হাসান প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়ে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে সে ১ম। সমাজে অনেক বৃত্তবান লোক আছে কেউ যদি আমাদের একটা ঘর করে দিতেন তাহলে ভালো হতো!।
হরিনাকুন্ডু পৌরসভার মেয়র ফারুক হোসেন জানান, আমার পৌরসভার ভেতরে তাদের বসবাস। তারা খুবই মানবিক জীবন যাপন করে। তারা দুস্থ অসহায় মানুষ, হাসানের বাবাও একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। পৌরসভা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা, চিকিৎসাসহ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
এসএম