ঢাকা: বেশ কয়েক দিন ধরে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করছে। এতে নাকাল রাজধানীসহ সারা দেশের সব বয়সী মানুষ।
তীব্র তাপদাহে রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। অসহ্য গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শপিং মল, মার্কেট কিংবা বাজারেও ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি কম। অনেকেই পূর্ণ সময়ের বদলে ঘণ্টা চুক্তিতে কাজ করছেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ প্রত্যুষে কয়েক ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি শুধু রাজধানীতেই নয়, সারা দেশেই বিরাজ করছে।
মালিকপক্ষ বা গৃহস্থদের ভাষ্য, বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমের উত্তাপ সইতে না পেরে কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন তারা। তাদের ভয়, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এ বিষয়ে সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলেও এমনটিই জানা গেছে।
টানা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। এদিকে কাজ না করলে খাবার জুটবে না। তাই পেটের তাড়নায় প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তীব্র গরমে নাজেহাল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখা মিলেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ছায়ার নিচে। গরমের কারণে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমে কষ্ট কয়েকগুণ বাড়লেও আয় বাড়েনি।
কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সড়কে অপেক্ষা করছিলেন দিনমজুর মামুন ও সিফাত। সঙ্গে টুকরি-কোদাল। তারা জানান, অনেক জায়গায় শত শত দিনমজুর কাজের সন্ধানে ভোর থেকেই অপেক্ষা করেন। কিন্তু গত ৭-৮ দিন ধরে অনেকেই আসছেন না।
আবাসন ও নির্মাণ সংস্থার কর্মকর্তা সাইফুল হোসেন জানান, ৮-১০ দিন আগেও রাস্তার পাশে দিনমজুর পাওয়া যেত। এখন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। আগে প্রতিদিন ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শত শত শ্রমিক অপেক্ষা করত, কখন ঠিকাদারের লোক আসবে। এখন আসছে হাতেগোনা কয়েকজন। শ্রমিক সংকটে নির্মাণের অনেক কাজ আটকে গেছে।
রাজধানীতে কয়েকজন বাসচালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা হয়। চালক আনিসুল জানালেন, বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী সংখ্যা হাতে গোনা। সকালের দিকে কিছু যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। সন্ধ্যার পরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দিনের বেলা যাত্রীদের দেখা মিলছে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই গরমে মানুষ বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না, যার প্রভাব পড়ছে গণ পরিবহণেও।
পরিবেশবিদরা বলছেন, গরমের এই অস্বস্তিকর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুদূষণও দায়ী। শুকনো আবহাওয়ায় এমনিতেই বাতাসে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। বাড়তে থাকে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ। গরমের সঙ্গে দূষিত কণাও মানুষের অস্বস্তির কারণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
এইচএমএস/এমজে