শিবচর (মাদারীপুর) থেকে ফিরে: বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন। ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার ট্রেন দুইটি চালু করা হলেও তার ভাড়া নির্ধারণ হওয়ার পরে যাত্রীদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা গেছে।
রাজবাড়ী থেকে ট্রেনটি ভাঙ্গা কমিউটার ও ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত একই রেকটিই ভাঙ্গা কমিউটার নামে চলবে।
শনিবার (০৪ মে) মাদারীপুরের শিবচরে এক অনুষ্ঠানে ট্রেন দুইটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। তবে ট্রেন দুইটি আগামীকাল রোববার (০৫ মে) সকাল থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, ভবিষ্যতে এই ট্রেন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।
ট্রেন দুটির ভাড়া যে কারণে বেশি
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচলকারী ভাঙ্গা কমিউটার ট্রেনটির ভাড়া ২২৫ টাকা। আর ট্রেনটি মাঝের তিন স্টেশন মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর স্টেশনে থামবে।
এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও ১০ কিলোমিটার পরের স্টেশন পদ্মা সেতুর অপর প্রান্তের জাজিরা এলাকার পদ্মা স্টেশনের ভাড়া ১৯৫ টাকা। অর্থাৎ সেতু পার হতে গেলেই গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা।
এরপর পরের স্টেশন শিবচর ২০৫ টাকা আর সবশেষ ভাঙ্গা স্টেশনে ২২৫ টাকা।
অন্যদিকে ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী রুটে চলাচলকারী চন্দনা কমিউটার ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ রাজবাড়ী থেকে এই দুই ট্রেনে ঢাকা ফিরতে ২৯০ টাকা খরচা হবে যাত্রীদের।
রেল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রুটে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও মধুমতী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এই ট্রেন তিনটিতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যেতে শোভন চেয়ারে লাগে ৩০৫ টাকা, ট্রেনগুলো ভাঙ্গার ননস্টপ যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়।
কিন্তু একাধিক স্টপেজের কমিউটার ট্রেনের নিচের সারির শোভন কোচে যেতে নির্ধারণ করা হয়েছে ২২৫ টাকা ভাড়া।
ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার ট্রেন যে রেক দিয়ে চলছে, তার ইঞ্জিন ও কোচের মান নিম্নমানের, যেটা দিয়ে ঢাকা আসতে ২২৫ টাকা ভাড়াকে অতিরিক্ত বলছেন যাত্রীরা।
উদ্বোধনী ট্রেনে সাংবাদিকদের বহন করা ট্রেনটির বগিতে ঢাকা ঘুরতে আসছিলেন সবুজ হোসেন। ট্রেনে নিয়মিত ঢাকা যেতে পারবেন বলে খুশি হলেও ভাড়ার কথা শুনে তার মধ্যে প্রকাশ পায় হতাশা। তিনি বলেন, বাসে ঢাকা যেতে ৩০০ টাকা লাগে। কিন্তু ট্রেনে যদি কম লাগতো তাহলে ভালো হতো। অনেকে ট্রেনে করে বাড়ি থেকেই অফিসে যাতায়াত করতে পারতেন। লোকাল ট্রেনে এতো ভাড়া রাখা ঠিক হয়নি।
বাসের সঙ্গে পদ্মার টোলের তুলনামূলক রেখা টেনে দেখা যায়, বাসের চেয়ে ট্রেনের যাত্রীদের টোল দিতে হচ্ছে বেশি। ৩১ সিটের একটি বাসের যেখানে ১৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় সেখানে জনপ্রতি টোল পড়ে ৪৫ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে নিম্নবিত্তের শোভন শ্রেণীর যাত্রীদের থেকেই নিচ্ছে ১৫০ টাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা কিরন শিশির বলেন, পদ্মা সেতুর টোলের কারণে ভাড়া বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ভাঙ্গা এক্সপ্রেস। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে চন্দনা এক্সপ্রেস।
ট্রেনটিতে ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণীর আসন ব্যবস্থা থাকবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২৪
এনবি/এফআর