ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তৃতীয় ধাপের ভোটের আগে বাংলায় মমতা-অমিত শাহ'র বাকযুদ্ধ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
তৃতীয় ধাপের ভোটের আগে বাংলায় মমতা-অমিত শাহ'র বাকযুদ্ধ

কলকাতা: রাত পোহালেই ভারতে তৃতীয় ধাপের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সোমবার(৬ মে) বঙ্গে সম্মুখসমরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন বর্ধমান-দুর্গাপুর জনসভায় ভোট প্রচারণায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করছে। কিন্তু মমতা দিদি এবং তাদের সহযোগী কংগ্রেস এসব চায় না। একটা সময় নিয়মিত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আলিয়া, মালিয়া, জামালিয়ার মত সন্ত্রাসবাদীরা ঢুকে পড়তো আর বিস্ফোরণ করত। কিন্তু ভোট ব্যাংকের কারণে তারা চুপ থাকত। কিন্তু বিজেপি সরকার এসব পশ্রয় দেয় না। তার প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন। আমাদের মোদি সরকারের আমলে উরি এবং পুলওয়ামা হামলা হয়েছিল। কিন্তু মোদিজি দশ দিনের মধ্যেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক আর এয়ার স্ট্রাইক করে পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদীদের নিঃশেষ করেছিল। এটাই হল আমাদের সরকার।

বাংলায় দাঁড়িয়ে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার বিষয় শাহ বলেছেন, লোকসভায় যখন ধারা ৩৭০ বাতিলের প্রস্তাব উঠেছিল, তখন সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধী এর বিরোধিতা করেছিল। বলেছিল, ৩৭০ ধারা রদ হলে কাশ্মীরে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু, রাহুল বাবা এরপর পাঁচ বছর হয়ে গেছে, রক্তবন্যা তো ছাড়ুন একটা পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেনি।

এদিন অমিত শাহের বক্তব্যে উঠে আসে ৩৭০ ধারা থেকে শুরু করে রাম মন্দির প্রসঙ্গ। একই সঙ্গে, সিএএ-এনআরসি ইস্যু থেকে শুরু করে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কথা বলে তৃণমূল শিবিরকে নিশানা করে শাহ।

আমন্ত্রণ করা সত্ত্বেও কেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনে যাননি সে বিষয়ে শাহর দাবি, মমতা দিদি যদি উদ্বোধনে যেত তাহলে একটি সম্প্রদায়ের ভোট তৃনমূল পেত না। মুসলিম সম্প্রদায়কে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক বলে অ্যাখিয়ত করেন শাহ। বলেন, মমতা ভোটব্যাঙ্কের ভয়ে রামকেই মন থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছেন।

এর পাশাপাশি শাহ বলেছেন, তৃণমূলের শাসনে সব উন্নয়ন বন্ধ হয়ে গেছে। বিজেপিকে ভোট দিলেই, বাংলায় উন্নয়নের জোয়ার আসবে। অমিত শাহর বক্তব্য, তৃণমূলের গুন্ডারা গরিব মানুষের থেকে চাঁদাবাজি করে। বাংলায় বিজেপি এলে এদেরকে উল্টো করে শায়েস্তা করে দেব। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রে ১৫ দিন ধর প্রচার করছেন। বিজেপিকে হারানোর পরিকল্পনা করছেন। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, ১৫ দিন কেন, ৫ বছর থাকুন, তাও দুর্গাপুর জিততে পারবেন না।

শাহ বলেছেন, একসময় ভারতের মধ্যে শিল্প-কারখানার কেন্দ্র ছিল বাংলা। কিন্তু কংগ্রেস, সিপিআইএম, মমতা সরকারের আমলে বাংলার সব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তৃণমূলের একটা কারখানায় উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। তা হল অপরাধ এবং দুর্নীতির কারখানা।

অপরদিকে বীরভুম ও বর্ধমানে দুটি জনসভা করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। দুই আসনের প্রচারণা থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন নেত্রী। তিনি বলেছেন, বাংলায় এসে বিজেপি বড় বড় কথা বলছে আর বাংলার বদনাম করছে। আর বলছে বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হঁটাও। আমি বলি, মমতা ব্যানার্জি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলায় থাকবে। তোদের কারো ক্ষমতা নেই মমতা ব্যানার্জির একটা চুল স্পর্শ করা।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম আলিবাবা ও তার চল্লিশ চোর। আর বিজেপি পার্টির দুজন নেতা আর সবাই কেতা। দুজন নেতা একজনের নাম মধুবাবু (নরেন্দ্র মোদি) আরেকজনের নাম বিধুবাবু (অমিত সাহা)। এই দুজনে মিলে আজ সারাদেশ লুট করছে। একথা আমি বললেই দোষ। ওদের অর্থমন্ত্রী (নির্মলা সীতারমণ) স্বামীও বলছে, এবার বিজেপি এলে দেশ লুট হয়ে যাবে। তাই যদি দেশ বাঁচতে চান, তাহলে এদের ইমিডিয়েট হটান।

মমতা আরও বলেন, জীবনে আমি অনেক প্রধানমন্ত্রী দেখেছি, কিন্তু এত মিথ্যাবাদী এবং হিংসুটে দেখিনি। এত অত্যাচারী, আর স্বৈরাচারী, এত পাপাচারী প্রধানমন্ত্রী আমি দেখিনি। যাদের জীবন শুরু হয়েছে দাঙ্গার মধ্য দিয়ে। তাদের কাছে আপনারা শান্তি প্রত্যাশা করেন?

জেনে রাখুন, ওরা সব কিছু আগে থেকে পরিকল্পনা করে। এখন এনআরসির পরিকল্পনা করেছে। আপনারা চান এনআরসি হোক? সিএএ হোক? ইউনিফর্ম সিভিল কোড হোক? দরকার হলে জীবন দিয়ে দেব কিন্তু বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করব না। আর যদি না চান তাহলে মনে রাখবেন এবার মোদিকে কোনভাবেই ভোটে জেতানো যাবে না। ফের ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে বাংলা। তাই বাংলায় তৃণমূল যত আসন বেশি পাবে তত বিজেপিকে শূন্য করে দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ৬ মে ২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।