ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গোল্ডেন রাইস ও বিটি বেগুন অনুমোদনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
গোল্ডেন রাইস ও বিটি বেগুন অনুমোদনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা

ঢাকা: বৈজ্ঞানিক গবেষণা ব্যতিত শুধু অনুমানের ভিত্তিতে গোল্ডেন রাইস ও বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন দিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশবাদী পাঁচটি সংগঠন। বাংলাদেশের কৃষিতে জেনেটিকালি মডিফাইড প্রযুক্তি ব্যবহারের যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে এবং বিজ্ঞানের নামে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেভাবে দেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো।

তাদের মতে, এখানে কৃষক বা দেশের জন্য কোন স্বার্থ্য হাসিল হয়নি বরং শুধু বাণিজ্যের জন্যই এটি করা হয়েছে।

সোমবার (৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‌'জিএম শস্য গোল্ডন রাইস এবং বিটি বেগুন: বাংলাদেশে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশ্নের নিরসন জরুরি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে বেলা, উবিনীগ, জিএমও বিরোধী মোর্চা, নয়াকৃষি আন্দোলন ও নাগরিক উদ্যোগ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার বলেন, দেশে ব্রি ২৯ প্রজাতির ধান কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। এ প্রজাতির ধানের মধ্যে ভুট্টার জিন ঢুকিয়ে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে গোল্ডেন রাইস উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ধানের ভেতর ভিটামিন এ থাকবে বলে দাবি করা হয়। তবে এটি অনুমান নির্ভর। যার মেধাসত্ত্ব রয়েছে সিনজেনটা নামের একটি বহুজাতিক বীজ কোম্পানির কাছে। এ গোল্ডেন রাইস নিয়ে সারা বিশ্বে বিতর্ক রয়েছে। তাই ফিলিপাইনে এর অনুমোদন বাতিল হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের কোথাও অনুমোদন না পেলেও বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইসের অনুমোদনের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমন অনুমোদনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ধানের আদি নিবাস বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি জাতের ধানের বীজের অধিকার হারাবে কৃষকরা।

জেনেটিক্যালি মডিফাইড বিটি বেগুনের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ২০১৩ সালে সাতটি শর্ত সাপেক্ষে বিটি বেগুনের অনুমোদন দেওয়া হলেও শর্তগুলো মানা হচ্ছে না। নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও কৃষকদের মধ্যে এমন বীজ জনপ্রিয়তা পায়নি। তাই কোনো অবস্থাতেই দেশে জেনেটিক্যালি মডিফাইড পদ্ধতির প্রয়োজন নেই। কীটনাশক ও অতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর দুই থেকে তিন লাখ ক্যান্সার রোগী ধরা পড়ছে। জিএম পণ্য এমন স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিশ্বের কোথাও অনুমোদন না পেলেও গোল্ডেন রাইস অনুমোদনের তোড়জোড় চলছে দেশে। বাংলাদেশ এখন পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। এটার কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সামাল দেয়ার সক্ষমতা কী সরকারের আছে? এখানে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি জড়িত। তাছাড়া দেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. এমএ সোবহান বলেন, এর পেছনে বাণিজ্য রয়েছে। প্রকৃতির ওপর জোর করা হলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। ভুট্টার জিন ধানে যুক্ত করে গোল্ডেন রাইজ করা হয়েছে, অথচ ভুট্টা খেলেই হয়।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম বলেন, বীজ ঐতিহ্যগত ভাবে সংরক্ষণ করে কৃষকেরা। এখন সেই বীজ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি। দেশের ৭৮ ভাগ জমির উর্বরতা কমে গেছে। খাদ্য ও কৃষি ভিত্তিক সংগঠন বলছে, একর প্রতি যে পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহারের কথা, তার চেয়ে ২০ গুন বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জিএমও বিরোধী মোর্চার চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৪
এসসি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।