ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘শাহাদাত’ নামে সদস্য সংগ্রহ,  জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৩

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
‘শাহাদাত’  নামে সদস্য সংগ্রহ,  জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৩

ঢাকা: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এজন্য ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল তারা।

আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন (২৫), দুই আঞ্চলিক প্রশিক্ষক জিহাদ হোসেন ওরফে হুজাইফা (২৪) ও আমিনুল ইসলামকে (২৫) গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুক্রবার (২৪ মে) র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর গুলিস্তান ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি উগ্রবাদী বই উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, গ্রেপ্তাররা ‘আনসার আল ইসলামের’ সদস্য। তারা আফগানিস্তান তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’ যোগাদান করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তাদের সদস্য সংগ্রহসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে।

তাই গ্রেপ্তাররা আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। ইসমাইল আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান এবং ‘শাহাদাত’ গ্রুপেরও প্রধান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

ইসমাইলের বরাতে কমান্ডার আরাফাত জানান, এ গ্রুপটি সালাহউদ্দিন নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। এ গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক কসরত প্রশিক্ষণ দিতো। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে।

তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা  করতো এবং সংগঠনের সব প্রকার নির্দেশনা এ অ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো।

তিনি আরও বলেন, এ সংগঠনের অধিকাংশই মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদরাসশিক্ষক সদস্যরা অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদরাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতো।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার ইসমাইল নারায়ণগঞ্জের একটি মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নরত। এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সে তার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে সংগঠনের রিক্রুটিং শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

গ্রেপ্তার জিহাদ একটি মাদরাসার শিক্ষক। সেও প্রায় ১ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি গ্রুপে বিদেশে অবস্থানরত একজন জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। এরপর থেকে তার মাদরাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

গ্রেপ্তার আমিনুল পেশায় একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। প্রায় ৬ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয়সূত্রে সেও সংগঠনে যোগ দেয়। পরে সে তার নিজ এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এক পর্যায়ে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সালাউদ্দিন বর্তমানে বিদেশে আছে। সংগঠনটির ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। আমরা অধিকর তদন্তে প্রত্যেকের অবস্থান শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।