ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যে কারণে ‘বন্ধু’দের হাতেই খুন হলো তপু 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
যে কারণে ‘বন্ধু’দের হাতেই খুন হলো তপু 

পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কিশোর তপু হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জয় (২০) এবং ঈশ্বরদীর মাশুরিয়া পাড়ার ঈসা খালাশি (১৯)। এ ঘটনায় সোহেল নামে আরেক আসামি পলাতক। নিহত তপু মাশুরিয়া পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে।

ছাত্রাবাসের পাশের বাড়ির রিকশাচালক আবুল কাশেম প্রামাণিকের ছেলে তপুর সঙ্গে ফ্রি-ফায়ার গেম, আড্ডা ও ধুমপান সবই করতেন খুনিরা। বয়সে ছোট হলেও তপুর সঙ্গে তারা বন্ধুর মতোই চলাফেরা করতেন। এদিকে আগের হত্যা মামলার খরচ, ছাত্রাবাসের বকেয়া এবং মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে প্রতিবেশীকে অপহরণ করে খুনি চক্র। কিন্তু তাতে সুবিধা করতে না পেরে তাকে হত্যার পর মরদেহ লুকিয়ে রাখে ছাত্রাবাসের ট্রাংকে। নিজেদের আড়াল করতে খুনিরা নেন নানা কৌশল। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি, ধরা পড়তে হয়েছে পুলিশের হাতে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ জুন দুপুরে ঈশ্বরদীর মশুড়িয়া কলেজ পাড়ার কিশোর তপু (১৪) বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তপুর মোবাইল ফোন দিয়ে তপুর বাবাকে ফোন করে জানানো হয়, তপুকে অপহরণ করা হয়েছে, তপুকে ফেরত পেতে হলে দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু সাত হাজার টাকা দেওয়ার পরও তপুর খোঁজ না পাওয়ায় তপুর মা বাদী হয়ে পরদিন থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। এরপর মাঠে নামে পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় খুনিদের শনাক্ত করা হলেও ভিকটিমকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে গত ২২ জুন মশুড়িয়াপাড়ার অরণ্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় একটি টিনের ট্রাংকে তপুর অর্ধগলিত রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার পর ঢাকায় পালানোর সময় পাবনা শহরের ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ট থেকে প্রধান অভিযুক্ত জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান যে তারা ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে অরণ্য ছাত্রাবাসের ভাড়াটিয়া। ভুক্তভোগী তপুর বাড়ি ছাত্রাবাসের পাশে হওয়ায় একসঙ্গে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলা, আড্ডা দেওয়া ও ধুমপান করতেন তারা। জয় আগে আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। তার মামলার খরচ, ছাত্রাবাসের খরচ এবং মাদক সেবনের জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। এজন্য তিনি সোহেল ও ঈসার সঙ্গে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কৌশলে তপুকে ছাত্রাবাসে ডেকে এনে জিম্মি করেন তারা। তপু আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে তারা ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করে বেল্ট দিয়ে তার হাত বেঁধে তাকে একটি ট্রাংকে ভরে রাখেন। পরে জয় ভিকটিমের মোবাইল ফোন দিয়ে তার বাবাকে কল দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এছাড়া আসামিরা ঘটনা আড়াল করতে নানান কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ তাদের শনাক্ত করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম, ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।