গাইবান্ধা: ডিঙি নৌকায় পারাপারের দীর্ঘ ভোগান্তির একপর্যায়ে দুই বছর আগে শুরু হয় কাঠের সেতু তৈরির কাজ। সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় স্বপ্ন বুনতে থাকেন স্থানীয়রা।
কিন্তু হঠাৎ দেবে গেছে সেতুর মাঝখানের চারটি পিলার। ফলে শেষ মুহূর্তে এসে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় পড়েছেন এলাকার সুবিধা প্রত্যাশী অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
বুধবার (২৬ জুন) এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুটির প্রায় ৩০ মিটার অংশ দেবে গেছে। এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট এলাকায় তিস্তার শাখা নদীর ওপর নির্মিত হয়ে কাঠের সেতুটি।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকায় করে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুই বছর আগে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ শুরু করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।
তারা আরও জানান, এরই মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০ ভাগ সস্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর ছাদের দুপাশে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। সেতুর পাটাতনে (সেতুর ছাদে) ঢালাইয়ের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয় জনগণ যাতায়াত শুরু করেছেন। বাইসাইকেল ও রিকশাসহ হালকা যানবাহন নিয়ে সহজেই পারাপার হচ্ছিলেন তারা।
এর মধ্যে সোমবার (২৪ জুন) রাতে মাঝখানের চারটি পিলার দেবে গেছে। ফলে পাটাতনের প্রায় ৩০ মিটার অংশ ঢেবে গেছে। সিসি পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্থানীয় জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। সেই সঙ্গে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেতুটির স্থায়িত্ব নিয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতিতে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মাঝখানের অংশ দেবে গেছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। তাই কাজটি শেষ করতে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানসম্মত কোনো কাজ হয়নি। ফলে সেতুটি দেবে গেছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ছয় মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।
এসব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগেই এ কাঠের সেতুর বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তবে পিলার দেবে যাওয়ায় চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেতুটি পরিদর্শন করে এটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে কি কি করণীয়, তা ঠিক করে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের মালিক ছানা মিয়ার ফোন বন্ধ থাকায় তার কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৪
এসআই