ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন

বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১৯ জনের মৃত্যু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১৯ জনের মৃত্যু রাজধানীর শনির আখড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ আনা হয়েছে।

নিহত সাংবাদিকের নাম হাসান মেহেদী, তিনি ঢাকা টাইমসে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা ঘটা সংঘর্ষের খবর আনতে গিয়ে ছররা গুলিতে নিহত হন তিন।  

নিহত অপরজনের নাম ওয়াসিম (৩০)। যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত এলাকা থেকে তাকে ঢামেকে আনা হয়। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত আরও দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ এসেছে। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগের সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা গেছে।  

ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একজনের নাম মোহাম্মদ। তাকে আজিমপুর থেকে আনা হয়েছে। অন্যজনের নাম নাজমুল। তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আনা হয়েছে। মোহাম্মদের শরীরে ছররা গুলির ক্ষত দেখা গেছে। নাজমুলের শরীরে কোপের আঘাত রয়েছে।

এদিকে নরসিংদীতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তাহমিদ তামিম (১৫) ও মো. ইমন মিয়া (২২) নামে দুজন নিহত হয়েছেন। নরসিংদী সদর হাসপাতালে ইমন এবং জেলা হাসপাতালে তাহমিদের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দার হাট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন তারা। দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার এ তথ্য জানিয়েছেন।  

নিহতদের একজন পটিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র মোহাম্মদ ইমাদ (১৮)। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।  

এই ছয়জনকে নিয়ে আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এর আগে রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চারজনের মৃতদেহ আসে। হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমানের গণমাধ্যমকে চারজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেননি।

বৃহস্পতিবার উত্তরায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দুজন নিহতের খবর নিশ্চিত করেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ। হাসপাতালে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তরায় ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উত্তরায় নিহতদের মধ্যে একজনের নাম শেখ ফাহমিন জাফর। তিনি টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। জাফরের মা কাজী লুলুল মাকহমিন ছেলের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারহানুল ইসলাম ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফায়াজ) নিহত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষকরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, দুপুরে রাজধানীর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ দিন দুপুরে রামপুরায় এক গাড়িচালক নিহত হন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় একজন ড্রাইভার। সংঘাতের সময় একটি মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হতে গিয়ে তিনি আহত হন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি।

অন্যদিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইয়ামিন নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। তিনি মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ ছাড়া মাদারীপুরে সংঘর্ষে সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপ্ত দে (২১) নিহত হয়েছেন। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রতিনিধি।

নরসিংদীতে এন কে এম হাইস্কুল অ্যান্ড হোমের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভূঁইয়া নিহত হয়েছেন। তার দেহে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলা খানা মোড় এলাকায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ছিল তাহমিদ।

তবে পুলিশ প্রশাসন বা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এমজেএফ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।