হবিগঞ্জ: ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী কালনী ট্রেনের ৫৩টি আসন শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের জন্য বরাদ্দ। আর প্লাটফর্মে অপেক্ষারত দুই শতাধিক যাত্রী।
সম্প্রতি সকাল পৌনে ৯টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে অবস্থান করে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এসময় টিকিট না পেয়েও ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকা বানিয়াচং উপজেলার ফারুক আহমেদ বলেন, টিটিকে (টিকিট পরীক্ষক) কিছু টাকা দিলে তিনি বসার সুযোগ করে দেবেন। এ সুবিধা না পেলে বগির কোনো এক কোণে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যাব।
জংশনে দায়িত্বরত মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শায়েস্তাগঞ্জ জংশন থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক যাত্রী কালনী ট্রেনে ভ্রমণ করেন। এজন্য স্টেশনে ভিড় লেগে থাকে।
সেখান থেকে আরও জানা যায়, শুধু কালনী ট্রেনই নয়; সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলকারী ছয়টি ট্রেনেই শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের জন্য টিকিটের বরাদ্দ কম। সিলেট থেকে ঢাকাগামী ছয়টি ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জের জন্য ১৯৭ ও চট্টগ্রামগামী দুটিতে ৮৪টিসহ মোট ২৮১টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজারের দুই স্টেশনে টিকিট সংখ্যা ৬৭৯টি। শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য এসি কেবিন রয়েছে ছয়টি। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের দুটি স্টেশনে ২৫টি এসি কেবিন বরাদ্দ।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী সকালের কালনী এক্সপ্রেসে শায়েস্তাগঞ্জের জন্য তিনটি এসি কেবিনসহ মোট ৫৩টি আসন বরাদ্দ রয়েছে; জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ৬৪টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ৩০টি ও উপবন এক্সপ্রেসে ৫০টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। এগুলোতে কোনো এসি কেবিন নেই।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে কালনী এক্সপ্রেসে ছয়টি এসি কেবিনসহ মোট আসন ১৪৯টি; জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ১১৫, পারাবত এক্সপ্রেসে ১৮টি এসি কেবিনসহ ১৬১টি ও উপবন এক্সপ্রেসে ১৩৫টি টিকিট রয়েছে।
এছাড়া সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের জন্য তিনটি এসি কেবিনসহ ৪৪টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে একমাত্র ৪০টি শোভন চেয়ার রয়েছে, কোনো এসি কেবিন নেই, মৌলভীবাজারের দুই স্টেশনে পাহাড়িকায় তিনটি এসি কেবিনসহ ৬৯টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে ৫০টি টিকিট রয়েছে।
যাত্রীরা জানান, ঢাকা ও সিলেট রেলপথে হবিগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন ধরে টিকিট সংকটে ভুগছেন। আর টিকিট কালোবাজারীদের উপদ্রব তো আছেই। দীর্ঘদিনের এ সংকট নিরসনের উদ্যোগ কেউ নিচ্ছেন না।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দা ফজিলাতুন্নেছা রিনা বাংলানিউজকে বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধে প্রায়ই ট্রেনে করে স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায় যাই। শায়েস্তাগঞ্জ জংশন থেকে টিকিট বরাদ্দ কম থাকায় সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে সেখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করি।
চিকিৎসক মুবিন ঠাকুর বলেন, ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ, তাই এ পথে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু অনলাইনে অথবা কাউন্টারে যোগাযোগ করে টিকিট পাওয়া যায় না। অথচ বেশি টাকা দিলে ব্ল্যাকে তাৎক্ষণিকভাবে টিকিট মেলে।
মৌলভীবাজার ও সিলেটের তুলনায় ট্রেনের টিকিটপ্রাপ্তিতে হবিগঞ্জ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন বলেন, রেলে হবিগঞ্জের টিকিট সংকট দীর্ঘদিনের। এ সংকট মোকাবিলায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা শিগগিরই এ সংকটের নিরসন চাই।
এ প্রসঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের মাস্টার গৌর প্রসাদ দাশ পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ জংশন থেকে রেলের আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ওপরের মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
এসআই