চাঁদপুর: ‘ক’ শ্রেণির চাঁদপুর পৌরসভায় শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক মেরামত করা হলেও মানসম্মত হয়নি। ফলে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে এসব সড়ক।
শহরজুড়ে সড়ক এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ শুরু হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান। এতে বন্ধ হয়ে যায় সংস্কার কাজ।
প্রশাসক নিয়োগের পর ফের শুরু হয়েছে থেমে যাওয়া সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ। কিন্তু এই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসী। তারা সড়ক নির্মাণ কাজের সঠিক মান বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক ও পুরানবাজার থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান দেখা গেছে। এসব সড়কের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত কংক্রিটসহ নির্মাণসামগ্রীগুলো নিম্নমানের বলে অনেকের অভিযোগ।
শহরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আলম বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড থেকে শপথ চত্বর পর্যন্ত। এই সড়কের কাজ দীর্ঘদিন পরে শুরু হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজে যেসব সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। আমার দাবি, এই সড়কের নির্মাণ কাজ যেন মানসম্মত হয়।
এদিকে শহরের পুরানবাজার লোহারপুল থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় দুই সপ্তাহ আগে। তবে টানা বৃষ্টি থাকায় ওই কাজটি অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টিতে ওই সড়কের কাজেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে, তা পরিলক্ষিত হয়। পানির সঙ্গে চলে গেছে মেকাডমের অনেকাংশ।
অপরদিকে চাঁদপুর পৌরসভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিউ ট্রাক রোড। এটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু সড়ক প্রশস্তকরণ ও অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ করায় কাজটি বন্ধ হয়ে থাকে। ফলে এই সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য। নিয়মিত দুর্ভোগে আছেন এই সড়কের বাসিন্দা ও যানবাহন চালকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন, শহরের কয়েকটি সড়কের অবস্থাই খারাপ। বিশেষ করে নিউ ট্রাক রোডের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। এই সড়ক কয়েকবার সংস্কার হলেও বছর না পার হতেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এই সড়কের করুণ অবস্থার কারণে যানবাহন এই এলাকায় আসতে চায় না। আশা করি, এবার কাজের গুণগতমান বজায় রাখা হবে।
চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম শামসুদ্দোহা বলেন, শহরের তালতলা সড়ক বিভাগের রাস্তার শেষ সীমানা থেকে ঘোষপাড়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ট্রাক রোডের কাজের সিদ্ধান্ত হয়েছিল শুধু কার্পেটিংয়ের। কিন্তু ইতোমধ্যে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই কাজ পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে হবে। খুব শিগগিরই এই সড়কের কাজ শুরু হবে।
কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না। আমরা নিজেরাই ভাটাতে গিয়ে ইট কিনে ল্যাবে পরীক্ষা করে কাজ করছি। এই কাজের মান সঠিক না হলে কর্তৃপক্ষ বিল দেবে না। আর কার্পেটিংয়ের কাজ বৃষ্টির মৌসুমে করা যায় না। যে কারণে আগামী নভেম্বর মাস থেকে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হবে।
চাঁদপুর পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শহরের করিম পাটওয়ারী সড়ক ও দোকানঘর থেকে লোহারপুল পর্যন্ত সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। কুমিল্লা রোডের কাজ শুরু হয়ে মেকাডম চলছে। এক মাস পরে কার্পেটিং শুরু হবে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ট্রাক রোডের কাজ শুরু হবে। এছাড়া শহরের কয়েকটি সড়কে গর্ত হয়ে আছে। সেগুলোর জন্য নির্মাণসামগ্রী কেনা হয়েছে। সংস্কার কাজ পর্যায়ক্রমে চলবে।
তিনি আরও বলেন, এসব কাজের জন্য প্রত্যেকটি নির্মাণসামগ্রী সততার সঙ্গে কেনা হয়েছে। কাজের গুণগত মান যাতে ভালো থাকে আমি নিজেসহ প্রকৌশলীকে নিয়ে কাজগুলো তত্ত্বাবধান করছি। তারপরেও কাজের ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪
এসএএইচ