ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গন্ধ ছড়ানো মাংস সংগ্রহশালায় না গিয়েই সুলতান’স ডাইনের গুণগান করলেন কর্মকর্তারা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৪
দুর্গন্ধ ছড়ানো মাংস সংগ্রহশালায় না গিয়েই সুলতান’স ডাইনের গুণগান করলেন কর্মকর্তারা সুলতান’স ডাইনের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষণ পাল ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

সিলেট: সুলতান’স ডাইনের সিলেট শাখায় পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত মাংস দিয়ে রান্না হচ্ছে মুখরোচক কাচ্চি বিরিয়ানি এমন অভিযোগে সত্যতা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাফাই গেয়েছেন সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো চার কর্মকর্তারা। আর পক্ষে গুণগান তাদের সেই বক্তব্যের রেকর্ডকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় বিস্মিত স্থানীয়রা। কারণ, পচা মাংসের দুর্গন্ধ বের হতে থাকা সুলতান’স ডাইনের মাংস সংগ্রহশালাতেই যাননি ওই চারজন কর্মকর্তা।  সেখানে না গিয়েই চাকচিক্যময় রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করেই সুলতান’স ডাইনের পক্ষে কীভাবে সাফাই গাইলেন তারা এ প্রশ্ন সবার মুখে। তাছাড়া প্রতিবেদন না দিয়েই পক্ষে বলার ভিডিও আইনসিদ্ধ কি না সে প্রশ্নও করা হচ্ছে।  

বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যান সিলেট সিটি করপোরেশনে সংযুক্ত সেনেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষণ পাল ও আব্দুল মুমিত, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এবং মনিতা রানী।

কিন্তু তাদের কেউ প্রতিষ্ঠানটির মাংস সংগ্রহশালা তথা নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ায় ইমন হাউজিং নামক টিনশেড বাসা পরিদর্শনে যাননি।

আর সঠিকভাবে তদন্ত না করেই সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে কয়েকটি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করা হয়েছে বলে বক্তব্য দেন সেনেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন পাল ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তারা সুলতান’স ডাইনের গুণগত মান ও পরিচ্ছন্নতার প্রশংসা করেন।

সংগ্রহশালায় না গিয়েই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া ও সেই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সেনেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন পাল বাংলানিউজকে বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সুলতান’স ডাইনে যাই। তবে কোনো মিডিয়ায় বক্তব্য দিইনি। সুলতান’স ডাইন তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।  

যদিও নিজের বক্তব্য দেওয়াকে অজ্ঞতা ছিল বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। তাছাড়া পচা মাংস সংরক্ষণের স্থান সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না বলে জানান বেনু ভূষণ পাল।  

এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চারজন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাই । তার কথা মতোই পরিদর্শনে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাই। পরিদর্শনকালে তারা পচা মাংসের বিষয়টি অস্বীকার করে। সেখানে কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলে, সেই বক্তব্য অজ্ঞাতসারে রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেব।

সুলতান’স ডাইনের সিলেট শাখা

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাওয়া দুইজন সেনেটারি ইন্সপেক্টর ও ২জন নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক একসঙ্গে যান। তারা নিজেদের থেকে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বলেন। তখন আমি অনুমতি দিই। কিন্তু অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাফাই গাওয়া কিংবা বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। তারা কেবল দেখে এসে প্রতিবেদন দিতে পারতেন। তাদের এই বক্তব্যের দায় আমি নিতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, সুলতান’স ডাইন তাদের পক্ষে সাফাই গাইতে এসব কর্মকর্তাকে নিয়ে গিয়েছিল কিনা এবং আর্থিক কোনো সুবিধার বিনিময়ে তারা এহেন কর্মকাণ্ড করেছেন কিনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া রোববার সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তাদের যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সিটি করপোরেশনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সিলেটে শাখা উদ্বোধন করেছে সুলতান’স ডাইন। তবে সুলতান’স ডাইনের মাংস সংগ্রহশালা থেকে গত কয়েকদিন ধরেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। গন্ধ আর সইতে না পেরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুলতান’স ডাইনের মাংস সংগ্রহশালা তথা নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ায় ইমন হাউজিং নামক টিনশেড বাসায় স্থানীয়রা জড়ো হন।  

ওই বাসায় খাসির মাংস মজুত করে রাখা আছে দেখতে পান তারা। আর সেই মাংসগুলো থেকেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পরে জানা যায় এগুলো সুলতানস ডাইনের খাসির মাংস।

সংগ্রহশালায় সুলতান’স ডাইনে সরবরাহের জন্য রাখা দুর্গন্তযুক্ত মাংস

খবর পেয়ে সাংবাদিকরাও ঘটনাস্থলে যান।  

স্থানীয়দের তোপের মুখে সেখানকার দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার কাপ্তান বাজারে খাসি জবাই করে মাংস সিলেটে এনে কাটা হচ্ছে। তাই একটু দুর্গন্ধ বের হবেই।

কোনো ফ্রোজেন মাংস ব্যবহার করেন না জানিয়ে সুলতান’স ডাইন সিলেটের ম্যানেজার অপারেশন জুলকার আহমদও স্বীকার করেন, মাংসগুলো  ঢাকা থেকে প্রতিদিন মাংস এসে সিলেটে কাটা হয়।  

এদিকে মাংসে পচন ধরাতেই এমন দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে বলে জানান সিলেটের খাদ্য নিরাপদ অফিসার সৈয়দ সারফরাজ হোসেন।  

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা মাইনাস ১২-১৮–এর মধ্যে থাকে তাহলে ওনারা মাংস রাখতে পারবেন। ডিপেন্ড করছে ওখানে ওনারা টেম্পারেচার কন্ট্রোল করছেন কি না। ঢাকা থেকে আনার সময় ফ্রিজিংভ্যান ব্যবহার করছেন কি না। সংরক্ষণের জায়গায় ফ্রিজিং ব্যবস্থা কেমন? যদি কোল্ড চেইন মেনটেইন হয়, তাহলে এ রকম দুর্গন্ধ হওয়ার কথা নয়। পচন ধরতেই দুর্গন্ধ হয়। ’

এরপরই পচা মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি তৈরি হচ্ছে সুলতান’স ডাইনে - এমন খবরে দিনভর তোলপাড় চলে সিলেট শহরজুড়ে।

এদিন যুবকেরা স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের শরণাপন্ন হলে তারা সুলতান’স ডাইনের ম্যানেজারকে অবহিত করেন। তারা এসে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাসায় বসে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবারই রেস্তোরাঁ পরিদর্শনে গিয়ে সুলতান’স ডাইনের পক্ষে গুণগান করে বক্তব্য দিলেন চার কর্মকর্তা।

আগের নিউজ লিংক>> এলাকাজুড়ে মাংসের দুর্গন্ধ, কী খাওয়াচ্ছে সুলতান’স ডাইন? 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৪
এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।