ঢাকা: উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেকে এসএস স্টিল লিমিটেড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মনিরুজ্জামান মনি (২৯) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এ সময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার ৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর আকাঙ্ক্ষা গ্রুপের মাহাবুব ব্রাদার্স প্রা. লিমিটেডের এজিএম (মার্কেটিং) সানোয়ার রহমান বাদী হয়ে গুলশান থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামান গত ১২ সেপ্টেম্বর নিজেকে এসএস স্টিল লিমিটেড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার জোহা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আকাঙ্ক্ষা গ্রুপের মাহাবুব ব্রাদার্স প্রা. লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। মোবাইল ফোনে তাদের মাঝে ব্যবসায়িক আলোচনা হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মনিরুজ্জামান বাদীকে এসএস স্টিলের রড সরবরাহের কথা বলে এসএস স্টিল কোম্পানির নামে খোলা একটি অ্যাকাউন্টে ৮০ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন।

দীর্ঘদিন যাবৎ এসএস স্টিল লিমিটেডের সঙ্গে লেনদেন থাকায় ও অ্যাকাউন্টটি এসএস স্টিলের নামে হওয়ায় বাদীর এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না হওয়ায় মনিরুজ্জামানের দেওয়া অ্যাকাউন্টে তিনি রডের মূল্য বাবদ ৮০ লাখ টাকা জমা করেন। যথাসময়ে রড সরবরাহ না পেয়ে তিনি মনিরুজ্জামানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান। তাৎক্ষণিকভাবে বাদী এসএস স্টিল লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এসএস স্টিল লিমিটেডের প্রকৃত জোহার সঙ্গে বাদীর কোনো যোগাযোগই হয়নি। বাদী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।

ডিবির সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকের অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিরুজ্জামান মনি চট্টগ্রামের একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত রক্ষিতের জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, টিন সার্টিফিকেট ও ট্রেড লাইসেন্স কৌশলে সংগ্রহ করে এসএস স্টিলের নামে এনসিসি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খোলেন। ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বাদীর কাছ থেকে প্রতারণা করে নিয়ে আসা রড বিক্রির ৮০ লাখ টাকা জমা হলে ছদ্মবেশে তা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন। ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে তার প্রকৃত চেহারা আড়াল করার জন্য চুল, দাড়ি বড় করে নিজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মুখে, হাতে ও চোখে মারাত্মক জখমের ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ব্যাংকে প্রবেশ করেন।

চোখে-মুখে ব্যান্ডেজ ও চুল-দাড়ি বড় থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তা তার প্রকৃত চেহারা শনাক্ত না করেই টাকা দিয়ে দেন। পরবর্তীতে মনিরুজ্জামান নিজেকে ঘটনা থেকে আড়াল করার জন্য কৃষি কর্মকর্তার জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত ঠিকানা চট্টগ্রামে যান। সেখানে গিয়ে তিনি প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কৃষি কর্মকর্তাকে কল করে এবং মেসেজ দেন, যাতে তদন্তে কৃষি কর্মকর্তার নাম আসে।

গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি প্রতারণার মামলা ও এসব মামলায় তিনটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
এজেডএস/এমজেএফ