ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সমাজে ইমাম-খতিবরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৪
‘সমাজে ইমাম-খতিবরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন’

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অর্জিত বাংলাদেশে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারে এবং সমাজের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইমাম ও খতিবদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু ইমাম ও খতিবরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের আধিপত্যের কারণে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন।

আমরা চাই ইমামরা স্বাধীনভাবে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নির্দ্বিধায় ধর্মের মৌলিক কথাগুলো মানুষের মাঝে তুলে ধরবে। সমাজে ইমামরা অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। তাদের বাদ দিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।

রোববার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় ইমাম ও খতিব সংস্থা বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনে ইমাম ও খতিবদের করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।  

বক্তারা বলেন, ইমাম ও খতিব এ দুটি শব্দ আমাদের কাছে অত্যন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার। একজন মুসলমানের কাছে সামাজিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পদ। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে জনসাধারণের কাছে ইমাম ও খতিবদের সামাজিক সম্মান এবং মর্যাদা অনেক বেশি থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা অবহেলার শিকার। এমনকি সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিগুলো সরকারের আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা অপমানিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে অহরহ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাজপতিদের নোংরা রাজনীতির শিকারও হতে হয় অনেক ইমাম-খতিবকে।  

তারা আরও বলেন, একজন ইমাম কিংবা খতিব মর্যাদা ও পদাধিকারে সমাজের সর্বপ্রধান ব্যক্তি হলেও বর্তমান দেশের সমাজ বাস্তবতায় তাদের নেই কোনো সোশ্যাল পাওয়ার ও যথাযোগ্য নেতৃত্ব। এছাড়া প্রায়ই আমরা দেখে থাকি যে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যারা নেতৃত্বের আসনে থাকেন কিংবা মসজিদ পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকেন তাদের দ্বারা ইমাম-খতিব, মোয়াজ্জিনরা নানা ক্ষেত্রে অপমান, অবমূল্যায়ন ও অবহেলার শিকার হন, তথাপি দ্বিনের অতন্দ্র প্রহরী ওলামায়ে কেরামরা আত্মমর্যাদা ও সম্মানের কারণে এহেন দুঃখ কষ্টগুলো কারো কাছে বলতে পারেন না।

খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ইমামদের যে সম্মান থাকার কথা সেটা এ সমাজে নেই। তবে অনেকে তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্মান অর্জন করেছেন। ইমামদের বেতন বাড়ানো উচিত। আজকের যুগে একজন রিকশাওয়ালাও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ইনকাম করে। কিন্তু ইমামদের বেতন অনেক কম।  

তিনি আরও বলেন, ইমামরা যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনা করা দরকার কিন্তু সেখানে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে সমাজের দুর্বৃত্ত শ্রেণির লোকেরা। তবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এমন কোনো কাজ ইমামদের করা উচিত নয়। বাংলাদেশের ইমামদের সব বিভক্তি বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইমামদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। বাদ দিতে হলেও সিস্টেম অনুযায়ী বাদ দিতে হবে।  

খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী বলেন, মসজিদ হচ্ছে সবকিছুর কেন্দ্র। মসজিদ একটি পবিত্র স্থান। মসজিদে আমরা এবাদত-বন্দেগি করে থাকি। এছাড়া মসজিদ থেকে ইমাম-খতিবরা সমাজের মানুষকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেজন্য ইমাম-খতিবদের স্বাধীনভাবে থাকার সুযোগ করে দিতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মসজিদ কমিটির সদস্য হয় সন্ত্রাসীরা। তাদের যদি কমিটিতে না রাখা হয় তারা সমাজে ফেতনা করা শুরু করে দেয়। মসজিদ কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারি হতে হলে অবশ্যই বিশেষ গুণাবলি থাকতে হবে। মসজিদ কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সদস্যদের কী ধরনের গুণাবলি থাকতে হবে সেটা সরকারকে নির্ধারণ করে দিতে হবে।  

মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী বলেন, বৈষম্য দূর করার জন্য দেশ আবারও স্বাধীন করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এখনো বৈষম্য রয়েছে। এ বিষয়ে সরকার একা বন্ধ করতে পারবে না। আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।  

আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, মসজিদের মধ্যে আবারও মক্তব চালু করতে হবে। লাইব্রেরি রাখতে হবে।  

জাতীয় ইমাম ও খতিব সংস্থা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মু. আতাউর রহমান সফিউল্লাহ বলেন, সমাজের ইমাম-খতিবরা সর্বোচ্চ ব্যক্তি। কিন্তু তারা বৈষম্যের শিকার। সেজন্য ইমাম-খতিবদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।  

সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় ইমাম ও খতিব সংস্থা বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি আবু তাহের আল মাদানী বলেন, বাংলাদেশে যত ইমাম-খতিব আছে তাদের স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের ওপরে যেন রাষ্ট্র প্রশাসন এবং কমিটির ওপর থেকে কোনো চাপ দেওয়া যাবে না। ইমামদের সম্মানজনক হাদিয়া দেওয়ার জন্য মসজিদ কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হোক। আমরা ইমামরা বৈষম্যের শিকার। মসজিদ যারা পরিচালনা করেন তারা সুদমুক্ত, মাদকমুক্ত, ঘুষমুক্ত করতে হবে। তাহলে বৈষম্য কমে যাবে।  

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এলে তারা কমিটি গঠন করে আবার বিএনপি এলে তারা কমিটি গঠন করে। এগুলো বাদ দিতে হবে। কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের দ্বারা কমিটি গঠন বাদ দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৪
ইএসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।