নরসিংদী: নরসিংদী সদরের হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকেই নরসিংদীর ইসকন মন্দির কর্তৃপর্ক্ষ শ্রমিকদের মাধ্যমে নদী ঘেঁষে গড়ে তোলা অনুষ্ঠানস্থল অপসারণে কাজ শুরু করে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) জুমার নামাজ শেষে নরসিংদীতে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসা থেকে মুসুল্লি ও ছাত্র-জনতা নরসিংদী পৌরসভা মোড়ে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে বিভিন্ন স্লোগানে হাজারো জনতা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলস্টেশন মসজিদের সামনে এসে জড়ো হন।
সেখানে এক সভায় ইসকন’কে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, ‘ইসকন’ একটি জঙ্গি সংগঠন। এ সংগঠনকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। তাদের বেশির ভাগ কার্যক্রম দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বিশ্বাসের ওপর আঘাত হেনেছে। পাশাপাশি নরসিংদী শহরের হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা উচ্ছেদের জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন মুসুল্লিরা। তাদের এই দাবি বাস্তবায়ন না হলে জেলার তৌহিদি জনতা এর কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি দেন।
পরে নরসিংদী ইসকন মন্দির কতৃর্পক্ষ নিজ উদ্যোগেই অনুষ্ঠানস্থল অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সকাল থেকেই শ্রমিকদের মাধ্যমে অপসারণ কাজ শুরু করে। শ্রমিকরা ট্রাকের মাধ্যমে মালামাল সড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ইসকন কতৃপর্ক্ষ জানায়, নরসিংদী ইসকন মন্দিরের সামনে খালি কোনো জায়গা নেই। যার কারণে তাদের অনুষ্ঠান করতে সমস্যা হয়। ইসকন প্রতিবছর রথযাত্রা অনুষ্ঠান করে থাকে। এ রথযাত্রার অনুষ্ঠানের জন্য তারা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে অস্থায়ীভাবে স্থাপনা করে অনুষ্ঠান করে থাকে। যার পরে তারা নিজেরাই এটা অপসারণ করে ফেলে।
নরসিংদী ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ প্রতীত পাবন নিমাই দাস বলেন, মন্দিরের খালি না জায়গা থাকার কারণে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে এটা অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনুষ্ঠান শেষেই বেশির ভাগ অংশ সরিয়ে নেওয়া হয়। আর পানি কমে গেলে বাকিটুকু অপসারণ করা হয়। এখন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা নিজ উদ্যোগেই এটা অপসারণ করেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কাজ সম্পাদনা করছি। প্রশাসন আমাদের সবসময় সহযোগিতা করছে।
হিন্দু বৌদ্ধ কল্যাণ ফন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব দীপক কুমার বর্মণ প্রিন্স বলেন, এটা উৎসব উপলক্ষে অস্থায়ী স্থাপনা করে অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বিষয়টা সামনে চলে আসায় ইসকন নিজের ইচ্ছায় স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন, এলাকাবাসী ও আমরা সবাই এ কাজে সহযোগিতা করছি। নরসিংদী সম্প্রীতির শহর, আমাদের সম্প্রীতি বজায় থাকবে।
এদিকে ইসকনের অনুষ্ঠানস্থল অপসারণের সময় ঘটনাস্থলে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসেন নরসিংদীর হেফাজতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশে কওমি মাদরাসা পরিষদ, ওলামা ও মুসল্লিদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে হাড়িধোয়া নদীর ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা অপসারণ করে জিনিসপত্র সড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা হিন্দুদের কোনো সংগঠন নয়। হিন্দুদের কেউ এটার প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা ভারতের দালাল, বাংলাদেশের শত্রু ও স্বাধীনতার শত্রু এ কথা দেশবাসীর কাছে সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশবাসীকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই ইসকনের আস্তানা ভারতের দালালি ও ভারতের আধিপত্য এ বাংলায় থাকবে না, স্বৈরাচারের কোনো হাত এ বাংলায় রাখা হবে না।
নরসিংদী সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ আলম বলেন, এখানে নদীর তীরে ইসকনের অনুষ্ঠানের অস্থায়ী স্থাপনা তারা নিজেরাই অপসারণ করছে। আইন-শৃঙ্খলা যাতে বিঘ্ন না ঘটে এজন্য আমরা এখানে অবস্থান করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২৪
জেএইচ