বরিশাল: বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যুবক সজল দাসকে (৩১) বাড়ি পাঠাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেছে একটি চক্র। তাও আবার নিখোঁজ যুবক সজল দাসের মোবাইল নম্বর থেকে তার নিজের মায়ের মোবাইলে কল করে চাওয়া হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় এরই মধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন নিখোঁজের চাচা শংকর দাস।
তিনি জানান, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার উত্তর রহমতপুর এলাকার দুলাল দাসের ছেলে সজল দাস। তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলায় ব্র্যাকে চাকুরি করেন। কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশালের কীর্তনখোলা নদী ও লাহারহাট খালের সংযোগ স্থলে তাকে বহনকারী স্পিডবোটটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এরপর থেকে সজল দাসের কোনো সন্ধান নেই।
চাচা শংকর দাস বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্বজনরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কীর্তনখোলা নদী ও আশপাশের এলাকা এবং হাসপাতালগুলোতে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। তবে এ অবধি তার কোনো সন্ধান মেলেনি কিন্তু সজল দাসের ব্যাগটি বরিশাল ডিসি ঘাট এলাকা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি স্বজনদের বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ব্যাগ পেয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, দুর্ঘটনাকবলিত ওই বোটটিতে সজল ছিল। তবে এরই মধ্যে সজলের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে তার মায়ের মোবাইলে কল করা হয় এবং অজ্ঞাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে জানানো হয় সজল তার জিম্মায় রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি সজলকে বাড়ি পাঠাতে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে এবং মোবাইল নম্বর ও বিকাশ নম্বর দেন।
তিনি বলেন, খবরটি পেয়ে বিকাশে কিছু টাকা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়, তবে অজ্ঞাত ব্যক্তির দেওয়া বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠানো যাচ্ছিল না। পরে সজলের নাম্বারসহ অজ্ঞাত ব্যক্তির দেওয়া নম্বরগুলোতে কল করা হলে সেগুলোর কোনটি বন্ধ আবার কোনটিতে কল ঢুকছিল না। এতে সন্দেহ হলে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিই।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিখোঁজ স্পিডবোটের চালক আলামিন ও অপর যাত্রী রাসেলের স্বজনদের কাছেও মোবাইল ফোনে কল করে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সজলের চাচা শংকর দাস।
তিনি বলেন, স্পিডবোটের চালক আলামিন ও অপর যাত্রী রাসেলের স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছেন। কিন্তু এখনও কেউ কারও সন্ধান পাননি। তবে উভয়ের স্বজনরা জানিয়েছেন তাদের কাছে কল করে টাকা চাওয়া হয়েছে। তাই বিকেলে তাদেরও থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তারা যায়নি। পরে হয়ত দেবেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছি। এরইমধ্যে সিমগুলোর বিষয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে সিম ক্লোন হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
তিনি বলেন, সিমের লোকেশনও এখন পর্যন্ত আগের দিনের জায়গাতেই রয়েছে। তাই এটি প্রতারক চক্রের কাজ হতে পারে। ভুয়া তথ্য দিয়ে এরা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে হয়তো। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিকালে কীর্তনখোলা নদী ও লাহারহাট খালের সংযোগস্থল জনতার হাট খেয়াঘাট এলাকায় বাল্কহেডের সাথে সংঘর্ষে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জনতার হাটের চায়ের দোকানি মো. রাহাত বলেন, তিনটার দিকে নদীর মধ্যে শব্দ হয়। যেদিক থেকে শব্দ আসে, সেইদিকে তাকিয়ে একটি বাল্কহেড যেতে দেখি। আর কিছু দেখতে পায়নি। কিছু সময় পর দেখি কয়েকজন লাইফ জ্যাকেট পরা ব্যক্তি সাঁতার কেটে তীরে আসার চেষ্টা করছেন। দ্রুত ট্রলার নিয়ে ৬ জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও লাহারহাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি স্পিডবোট আরো দুই যাত্রীকে উদ্ধার করে বরিশাল নিয়ে গেছে।
স্পিডবোট মালিক সমিতির একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট ১০ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি নিয়ে চালক বরিশাল নগরের ডিসিঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লাহারহাট খাল থেকে কীর্তনখোলা নদীতে প্রবেশ করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই মালিকের দাবি তিনজন নিখোঁজ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ