ঢাকা: ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায় বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। তবে সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ করেই নির্বাচন দেওয়ার প্রত্যাশা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে ড ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে ড. ইউনূসের এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক বলছেন নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ করে নির্বাচন দিতে হয়, তাহলে আরও ৬ মাসের মতো সময় প্রয়োজন বলে ড. ইউনূস বলেছেন। সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ হয়ে যেন নির্বাচন দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে জবাবদিহিতায় রাখার মতো একটা সিস্টেম যেন তৈরি হয়। সেটা ছাড়া নির্বাচন দেওয়া আমরা সমর্থন করি না। আমরা মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ সংস্কার করে যাওয়া প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখানে সাংগঠনিক স্ট্রাকচারের মধ্যে থেকেই গণহত্যা চালিয়েছে। এর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে গত ১৫ বছর তারা যেভাবে খুন, গুম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি চালিয়েছে, সেটারও বিচার দরকার। এখন সে প্রক্রিয়ার প্রবেশ করা দরকার।
সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও নির্বাচনের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। তিনি বলেন, এটি নিঃসন্দেহে খুবই ভালো। কারণ এতদিন একধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সে জায়গায় প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি সুনির্দিষ্ট করেছেন। তবে তা আরও স্পেসিফিক হলে ভালো হতো। প্রথম দিন থেকেই একটা রোডম্যাপ ছিল। যে আমরা কতদিন থাকব, কতদিন পর জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। তারপরও যে তথ্য জানানো হয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তিনি বলেন, সংস্কার চলছে, এটি চলমান থাকবে। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগসহ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে উন্নয়ন, তা দুই-একবছরে হয়নি। এটিকে বছরের পর বছর পরিচর্যা করতে হয়েছে। সুতরাং সংস্কার চলমান থাকবে। পরবর্তী যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা প্রক্রিয়া চালু রাখবে। কিন্তু সংস্কারের জন্য অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকবে, আমার মনে হয়, তাতে এই ধারণার সাথে একধরনের বিরোধ তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর ‘সংস্কার’ এবং ‘নির্বাচিত সরকার’ এরমধ্যে একধরনের বিরোধ তৈরি করা হয়েছে। যেন মনে হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার সংস্কার করবে না। কিন্তু জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিট এখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এদিকে শেখ হাসিনার বিচার ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না জাতীয় নাগরিক কমিটি। নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় আহবায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, বিচারের আগে যারা নির্বাচনের পাঁয়তারা করবে, আমরা তাদের জাতীয় শত্রু ও বেইমান হিসেবে ধরে নেব।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, যে ঘোষণা দিয়েছে, তা ইতিবাচক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন করা সম্ভব। এছাড়া বিচার নিশ্চিতের যে দাবি আমাদের আছে, সে প্রক্রিয়া যেন দ্রুতগতিতে করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৬ বছরে ভঙ্গুর হয়ে গেছে। সেগুলোকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ছাত্রসংগঠন হিসেবে এগুলো আমাদের প্রত্যাশা। কী করবে তা সরকারের বিষয়। আমরা মনে করি অংশীজনের সাথে বসে পরামর্শ করে কাজ করা এবং যে পরামর্শগুলো ইতোমধ্যে এসেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, মানুষ অভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়েছে। তারা চায়, বিগত দিনের যে সিস্টেম পরিবর্তন। সাংবাধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তারা সেগুলোর সংস্কার চায়।
তিনি বলেন, এই সরকার সংস্কার করবে এবং একটি নির্বাচন দেবে। যেহেতু তারা নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। মানুষের প্রত্যাশা হলো তারা যেন প্রতারিত না হয়। যেন ভোট দেওয়ার জন্য গণধর্ষণের শিকার না হয়; সেবার পরিবর্তে পুলিশ বাহিনী যেন পেটোয়া বাহিনী না হয়; বিচার বিভাগ যেন কুক্ষিগত না হয়। প্রত্যেকটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেন ঠিকঠাক কাজ করে। সেগুলো পূরণ করত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
এফএইচ/এমএম