ঢাকা, বুধবার, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পদোন্নতি ও কোটা সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে ডিসিদের প্রতিবাদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
পদোন্নতি ও কোটা সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে ডিসিদের প্রতিবাদ

ঢাকা: উপসচিব পদে পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশের বদলে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশের ঘোষণার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং সারা দেশের ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর কার্যবিবরণী প্রেরণের মাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠায়।

অ্যাসোসিয়েশন প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে এই ধরনের ঘোষণা অনভিপ্রেত, আপত্তিকর ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল। উপমহাদেশে সিভিল সার্ভিসের ইতিহাসে সব সময়েই প্রশাসন ক্যাডার/সার্ভিসের লোকেরাই উপসচিব/যুগ্মসচিব/অতিরিক্ত সচিব/সচিব পদে কাজ করে আসছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস বলে পৃথিবীর সব সময়ে সকল স্থানে রাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বর্তমান প্রশাসন ক্যাডারের অনুরূপ একদল মানুষ নিয়োজিত ছিল। রাষ্ট্র যাতে জনতার স্বার্থ সংরক্ষণ করে সেই উদ্দেশ্য ম্যাক্স ওয়েবার ও উড্রো উইলসন মেধাভিত্তিক, রাজনীতিবিদ থেকে আলাদা, আইন-কানুনকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা একদল মানুষের সমন্বয়ে আমলাতন্ত্রের ধারণার প্রচলন করেন। উপমহাদেশে আইসিএস, পাকিস্তান আমলে সিএসপি ও বাংলাদেশের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার মেধাভিত্তিক সেই আমলাতন্ত্রের মূল ধারা। রাষ্ট্রে প্রশাসন ক্যাডারের কার্যপরিধির সঙ্গে পলিসি মেকিং এর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। প্রশাসন ক্যাডারের সাথে অন্য ক্যাডারের একটা বড় পার্থক্য হলো প্রশাসন ক্যাডারের কাজের ধরন হোলিস্টিক যেখানে অন্যান্য ক্যাডারের কাজের ধরন স্পেসিফিক ও বিশেষ প্রকৃতির।  

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারের নির্বাহী বিভাগের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে সহকারী কমিশনার/সহকারী কমিশনার (ভূমি)/উপজেলা নির্বাহী অফিসার/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পলিসি নয় বরং সকল পলিসি বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের মূল কাজটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই করে থাকেন। এসব কাজ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য যে পলিসি এক্সপার্টাইজ ও সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে আসে তা সচিবালয়ের পলিসি তৈরিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। পলিসি তৈরির ক্ষেত্রে সচিবালয়ে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা পলিসি সম্বন্ধে মাঠের বাস্তবতা, অর্জিত জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দেশের জনগণের প্রতিনিধি রাজনীতিবিদদের কাছে তুলে ধরেন যারা দেশের নেতৃত্ব দেন। সচিবালয়ে আমলাতন্ত্র রাজনীতিবিদ ও মাঠপ্রশাসনের মধ্যে একটি যোগসূত্রের মত কাজ করে। এ কারণেই মাঠ প্রশাসনে কর্মরতরাই এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আপিল বিভাগের রায়ে কেন ৭৫ শতাংশ কোটা প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষণের দরকার সেই যুক্তিগুলোও তারা তুলে ধরেন। আপিল বিভাগের রায়ে উল্লেখ করা হয়, সুযোগের সাম্য হবে একই শ্রেণিভুক্তদের মধ্যে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার শুরুতেই এই সাম্য ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর মেধার ভিত্তিতে বেশি নাম্বার পাওয়ারাই বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে এসেছে। যেহেতু পিএসসি সুপারিশ পর্যায় থেকেই কর্মকর্তারা চয়েজ ও নম্বরের ভিত্তিতেই বিভিন্ন ক্যাডারে শ্রেণিভুক্ত হয়ে যান সেহেতু প্রশাসনিক উপসচিব পদে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তা ব্যতিরেকে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পুনরায় নিয়োগ বা পদোন্নতি বা গ্রেড উন্নয়ন পাওয়ার সহজাত কোনো অধিকার নেই।

সারা দেশের সকল জেলা প্রশাসকও একই বিষয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং এই প্রস্তাব গৃহীত হলে এটি প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যমূলক হবে তারা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এমআইএইচ/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।