ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভাঙচুর মামলায় খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
ভাঙচুর মামলায় খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশারকাজীপুর গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সাত বছরের সাজা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ বিএনপির আরও ৬৮ নেতাকর্মী। এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ায় সাবেক উপমন্ত্রী দুলুর নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা রইল না।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক এএফএম মারুফ চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় আদালতে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উপস্থিত না থাকলেও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।  

এ মামলায় দুইটি আপিলকারীর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এতে এক আপিলে ৩০ জন ও অপরটিতে ৩৮ জনসহ মোট ৬৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

মামলার বাদী ছিলেন, নলডাঙ্গা উপজেলার রামশারকাজীপুর গ্রামের আনিসুর রহমান শাহ’র ছেলে মো. আসাদুজ্জামান।

আসামিপক্ষের আইনজীবী শরিফুল হক মুক্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, ২০০৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজীপুর গ্রামে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকতার দুলুর ভাতিজা ও তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে যুবদল নেতা সাব্বির আহমেদ গামাকে হত্যা করা হয়। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি গামা হত্যায় অভিযুক্তদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীকালে এ ঘটনার তিন বছর পর ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের শাসনামলে ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে রুহুল কুদ্দুস তালুকতার দুলুসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে নলডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিলে একই বছরের ৬ আগস্ট নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রওনক মাহমুদ এ মামলায় তিনটি ধারায় অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ ৯৪ জনকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।

পরে ওই সাজার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৬ আগস্ট আদালতে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ৩০ জনের পক্ষে এবং তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ৩৮ জনের পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন। ওই আপিলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আজ এ রায় দেন।  

রায়ে মোট ৬৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অভিযুক্তদের বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বলেন, এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ায় সাবেক উপমন্ত্রী দুলুর নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা রইল না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এমন রায়ে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাটোর কোর্ট ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) মোস্তফা কামাল রায় ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি ) অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন তালুকদার টগর বাংলানিউজকে জানান, বিচারক মামলার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, দুলুর ভাতিজা যুবদল নেতা সাব্বির আহম্মেদ গামা হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে সেই হত্যা মামলার আসামি ও তাদের স্বজনরা পরিকল্পিতভাবে দুলু ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে ঘটনার তিন বছর পর কাউন্টার মামলা হিসেবে এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলানিউজকে বলেন, যে ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছিল, সেই ঘটনার সঙ্গে কখনও তিনি এবং তার নেতাকর্মী কেউ জড়িত ছিলেন না। অথচ মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকেসহ তার নেতাকর্মীদের অযাচিতভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এতে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা মামলার রায়ের বোঝা বহন করছিলেন।

আজকে আদালতে যে রায় ঘোষিত তাতে তিনি খুশি। কারণ এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্যের জয় হয়েছে আর মিথ্যার পরাজয় হয়েছে। এছাড়া তিনিসহ ৬৮ জন নেতাকর্মী খালাসের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে অন্যায় কখনও টেকসই হয় না, দেরিতে হলেও ন্যায় বিচার পাওয়া যায়। এই ন্যায় বিচারের জন্য আদালতসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।

মামলার বাদী মো. আসাদুজ্জামান একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে এ রায়ের ব্যাপারে তার কোনো মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।