ঠাকুরগাঁও: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা সাবেক বিডিআর সদস্য মোতাহার হোসেন মানিক (৩৬)। ১৬ বছর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি ফেরেন তিনি।
১৬ বছর আগে মানিক বিয়েও করেছিলেন। বিয়ের তিনদিন পর ফিরেছিলেন নিজ কর্মস্থলে। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে।
শনিবারও (২৫ জানুয়ারি) মানিকের বাড়ি গিয়ে ভিড় দেখা গেছে। কথা হয়েছে তার মা মুক্তা বেগম, স্ত্রী ববি আক্তারের সঙ্গে।
মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন পর নিজের নাড়ি ছেড়া ধনকে বুকে পেয়েছেন। আর কোথাও তাকে যেতে দেবেন না। আর কোনো মায়ের বুক ফ্যাসিজমের কারণে খালি না হোক, এটাই চান মুক্তা।
বিডিআরে চাকরি পাওয়ার পর ট্রেনিংয়ে ছিলেন মানিক। ট্রেনিং শেষে ছুটিতে বাড়ি ফিরে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ে হয় পাশের গ্রামের ববি আক্তারের সঙ্গে। তার চাকরির বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস। বিয়ের তিনদিন পর কর্মস্থলে ফেরেন মানিক। এরপরই গ্রেপ্তার হন।
মাত্র তিনদিন পর স্বামীর গ্রেপ্তারে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন ববি। কিন্তু আস্থা হারাননি। বরং স্বামী একদিন ফিরে আসবেন, সেজন্য অপেক্ষা করেছিলেন। ১৬ বছর পর স্বামীকে পেয়ে মনের আশা পূরণ হয়েছে; মানিককে পেয়ে কান্নার বাঁধ ভাঙে তার।
কথা হলে বাংলানিউজকে ববি বলেন, বিয়ের তিন দিনের মাথায় স্বামী কারাগারে চলে যান। তখন থেকে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম। দিন গড়িয়ে বছর হয়েছে, বছর গড়িয়ে দশক হয়েছে, তবু তার মুক্তি মেলেনি। ১৬ বছর পর সেই দিন এলো।
মানিকের বাবার নাম আবুল হোসেন। তারা বসবাস করেন মোতাহার হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের কচুবাড়ী জোতপাড়া গ্রামে। আবুল হোসেন ছিলেন একজন ইউপি সদস্য। তিন বছর আগে তার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর খবর বাড়ি ফিরে জানার পর মানিক কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কথা হয় মানিকের সঙ্গে। কান্না চোখে নিয়ে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বিনা বিচারে আমি ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। যদি সঠিক বিচার হতো, তাহলে আমার কারাভোগ করতে হতো না। এতবছর পর মায়ের কোলে ফেরার অনুভূতি অন্যরকম। ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্ত্রীকে পাওয়ার অনুভূতিও অন্যরকম। এসব বলে বোঝান যাবে না। সৃষ্টি কর্তার কাছে শুকরিয়া। কিন্তু বাবা হারিয়েছি। এর চেয়ে কষ্ট পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না।
তিনি বলেন, ১৬ বছর জেলখানায় কেটে গেছে। কি হয়েছে, এটা সবাই জানে। চাকরির বয়সও ছিল মাত্র ৬ মাস। ট্রেনিংয়েই কেটে গেছে পুরো সময়। এর মধ্যে কী অপরাধ করতে পারি আমি? আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি কোর্টে হাজিরা। প্রহসনের কোর্ট; আমাদের ওপর প্রহসনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই এটা বাতিল বা শেষ করতে পারে। জানি না আর কতদিন হয়রানি হতে হবে!
বিডিআরের এই জওয়ান আরও বলেন, আমাদের অনেক অসহায় ভাই এখনো কারাগারের ভেতরে। তাদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া।
অনেক কথার মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে ভোলেননি মানিক। এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। মুগ্ধ-সাইদদের আত্মত্যাগের কারণে মায়ের কোল ফিরে পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিজম দূর হয়েছে, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
এমজে