ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কাটাসুরে বস্তির আগুনে পুড়লো ২ শিশু, ৫০০ ঘর

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
কাটাসুরে বস্তির আগুনে পুড়লো ২ শিশু, ৫০০ ঘর ছবি: সায়মন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: খানিক আগে যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তা নিভে গেছে। নিভে যাওয়ার খবর স্বস্তির হলেও সে আগুনের অভিশাপে শোকের মাতম চলছে মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার পুলপাড় বস্তিতে।

সর্বনাশা আগুন কেড়ে নিয়েছে দুই অবুঝ শিশুর প্রাণ। ৪০ দোকান আর ৫০০ বসত-ঘরের সঙ্গে পুড়ে ছাই করে দিয়েছে হাজার-লাখো স্বপ্নও।

রোববার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় বাংলানিউজ।

আগুন নিয়ন্ত্রণে মোহাম্মদপুর, পলাশী, লালবাগ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ মিলিয়ে ফায়‍ার সার্ভিসের মোট ১১ ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর পৌনে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে বাংলানিউজকে জানান ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষের জয়েন্ট ডিউটি অফিসার নাজমা আক্তার।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জসিমও বাংলানিউজকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের গৃহকর্ত্রী মনোয়ারা বাংলানিউজকে বলেন, আগুনে আমার ঘরসহ অন্তত ৪০টি দোকান ও ৫০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। এসব বাড়িতে প্রায় ৫০০ ঘর ছিল।

আগুনে ফাতেমা নামে এক শিশু ও অজ্ঞাপরিচয় আরও এক শিশুর মৃত্যু হয় বলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফাতেমা নামে ওই শিশুকে বাসায় ঘুমন্ত রেখে তার বড়বোনকে নিয়ে মা আসমা স্কুলে যান। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের খবরে বাসায় ফিরে আর ফাতেমাকে জীবিত পাননি তারা।

মনোয়ারা জানান, তিন তলা একটি টং ঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বস্তির পূর্ব পার্শ্বের ঘরগুলো বেশি আগুনে পুড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পশ্চিম পার্শ্বের ঘরগুলোও।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরু পথ হওয়ায় বস্তিতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে ফায়ার সার্ভিসকে বেশ বেগ পেতে হয়।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্ডের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পানির অভাবের কারণে বেশি বেগ পেতে হয়।

তিনি বলেন, এলাকার বাসাবাড়ি থেকে পানি কিনে ক‍াজ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বস্তি এলাকায় প্রবেশের রাস্তা সরু। এ কারণে আমাদের ১১টি ইউনিট থাকলেও সবগুলো দিয়ে কাজ করতে পারিনি।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, পুলপাড় বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকার পুনর্বাসিত করবে।

তিনি বলেন, দুই ধরনের পুনর্বাসনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। একটি আপদকালীন ও অপরটি স্থায়ী পুনর্বাসন। পরিবারগুলো যেন শীতে কষ্ট না পায় সেজন্য তাদের আপাতত আপদকালীন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে সরকার। স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়ে পরে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আগুন লাগার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, কীভাবে আগুন লাগল, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫

** পুলপাড় বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, এক শিশুর মৃত্যু
** পুলপাড় বস্তির আগুন নেভানোর কাজে পানির অভাব
** ৫০০ ঘর পুড়ে ছাঁই
** আগুনে পুড়ল সাহিদার মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন
** মোহাম্মদপুরে পুলপাড় বস্তিতে ‍আগুন বাড়ছেই
** মোহাম্মদপুরে পুলপাড় বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট
** ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করবে সরকার’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।